নির্বাচন বন্ধ করার চক্রান্ত ছিল: সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বুধবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।

নির্বাচন বন্ধ করার চক্রান্ত ছিল: সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রথম নিউজ, অনলাইন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশে বিগত ৭ই জানুয়ারি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি বললেই চলে, যেখানে ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে এ নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি বহু ষড়যন্ত্র ছিল। এ নির্বাচন বন্ধ করার চক্রান্ত ছিল। তারপরেও দেশে উৎসবমুখর নির্বাচন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যারা নির্বাচন বর্জন করেছিল, বানচাল করার চেষ্টা করেছিল, তারা ভোটের পরে যখন দেখলো সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা/অভিনন্দন বার্তার বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন তখন তাদের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এখন তারা আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছে। বুধবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের যেখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান সেখানেই তিনি ‘সেন্টার অব এটাকশন’ হন। গাজায় নির্বিচারে যে গণহত্যা হচ্ছে তা নিয়ে বিশ্ব নেতারা যখন নিশ্চুপ, নির্বিকার, সেখানে এ গণহত্যা জোরালোভাবে বন্ধ করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজকে গাজায় গণহত্যা হচ্ছে সেখানে ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পৃথিবী অসহায় হয়ে তাকাচ্ছে বা নীরব থাকছে। এখানে মানবতার বিরুদ্ধে অনেকেই নীরব থাকছে। এটা অপরাধকে সমর্থন জানানোর শামিল। কিন্তু জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গাজায় যা হচ্ছে তা গণহত্যা হচ্ছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তিনি জেলেনেস্কিকে যুদ্ধ বন্ধের পথ বের করার কথা জানিয়েছেন।  তিনি মানবতার মা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার সময় তিনি ঘরের দুয়ার শুধু নয়, মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিলেন। এখন রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বছর ৩৫ হাজার শিশু জন্ম নেয়। এটা আমাদের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সমস্যার কারণ। এ জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের লক্ষ্য আলোচনায় বসে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রত্যাবসন ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

নির্বাচনে ভোট কাস্টের উদাহরণ হিসেবে হাছান মাহমুদ বিভিন্ন দেশে ভোট পড়ার তথ্য সংসদে জানাতে গিয়ে বলেন, রোমানিয়ায় ২০২০ সালের নির্বাচনে ৩১.৮৪ ভোট পড়েছে। হংকং এ ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বুলগেরিয়ায় ২০২২ সালে ৩৭.৯৮ শতাংশ, আয়ারল্যান্ডে ৪৩.৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। পর্তুগালে ৩৯.২৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ সেখানে নির্বাচন প্রতিহতের কোন ঘোষণা ছিল না। কিন্তু আমাদের দেশে কিভাবে নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা হয় তা সবাই জানেন। কিন্তু এরপরেও যে উৎসবমুখর পরিবেশে যে ভোট হয়েছে তাকে ‘ফেসটিভ ইলেকশন’ বলা চলে। যদি জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত আগুন দিয়ে ট্রেনে একটি শিশুসহ পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তা না হলে নির্বাচনে আরো ১৫-২০ শতাংশ ভোট পড়তো। নির্বাচনের পরে যে অপশক্তি নির্বাচন বর্জন করেছিল তারা উন্মুখ হয়ে বসেছিল  বিশ্ববাসী এ নির্বাচন নিয়ে কি বলে।

কিন্তু বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে চার চার বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তখন তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বহু দেশ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে, আরো ৩২ টি সংস্থা- জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় কমিশন, বিশ্ব ব্যাংক সহ আন্তর্জাতিক সংস্থা শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীরতর করার কথা বলেছেন। গত ১৫ বছরে এদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিশ্বে উদাহরণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সূচকে গতবারে ১২৩ থেকে উন্নীত হয়ে ১১৬ তম দেশে উন্নীত হয়েছি আমরা। বাংলাদেশ এখন জিডিপিতে ৩৫তম অর্থনীতির  দেশ, আর পিপিপিতে ৩১তম দেশ। বিভিন্ন সূচক বলছে  ২০৩৭ সালে বাংলাদেশ হবে ২০তম অর্থনীতির দেশ হবে। আইএমএফের হিসেব অনুযায়ী মাথাপিছুর দেশ হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশ পিছনে ফেলেছে। অর্থনৈতিক সূচক, সামাজিক সুচকসহ সব ধরনের সূচকে আমরা পাকিস্তানকে পিছনে ফেলেছি। আজ পাকিস্তান আমাদের দেখে দীর্ঘশ^াস-হাহুতাশ করে। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ রচনার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার সার্থকতা।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন আমাদের জিডিপির আকার ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার , আজকে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার। আজকে গ্রাম শহর হয়ে গেছে। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের আমরা ৯২ তম দেশ। কিন্তু  ধান উৎপাদনে আমরা ৩য়, মাছ উৎপাদনে ৪র্থ, ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। এটি এমনি হয় না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে। জেন্ডার গ্যাপে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান ৫ম। ব্লুমবার্গের রিপোর্টে আমাদের অবস্থান বিশ্বে ২০তম, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। 

জাতীয় পার্টির এমপি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৭ জানুয়ারি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও ঘন কুয়াশার মধ্যে আমার এলাকায় উৎসব মুখর ভোট হয়েছে । ভোট বর্জনের জন্য অনেক চক্রান্ত করলেও তা সফল হয়নি। এসময় তিনি বলেন, এলাকায় রাস্তা ঘাট ও পানি নিষ্কাশন সমস্যা রয়েছে এগুলো সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন দেশে এখন সবচেয়ে বড় হচ্ছে চিনি সিন্ডিকেট, এটা ভাংতে হবে, তবে রাস্তা কেউ খুঁজে বের করতে পারে না। যারা ইমপোর্ট করে তাদের মনিটরিং করতে পারলে, তারা কোথায় কত দামে বিক্রি করলো তা খুঁজে বের করতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কিছুটা সিন্ডিকেটকে আঘাত করা সম্ভব।

এমপি সোলায়মান সেলিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ জন্য আমাদের সব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। এসময় তিনি পুরাণ ঢাকার ইতিহাস, আন্দোলন সংগ্রামে পুরাণ ঢাকার অবদান ইতিহাসকে তিনি স্মরণ করেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আরো আলোচনায় অংশ নেন এমপি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, কামাল আহমেদ মজুমদার, শহিদুজ্জামান সরকার, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল আরেফিন,  এইচ এম ইব্রাহীম,  এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার, একরামুল করিম, মকবুল হোসেন, খান আহমেদ শুভ এবং জাহিদ আহসান রাসেল প্রমুখ।