জুলাই ঘোষণা নিয়ে কী হচ্ছে

জুলাই ঘোষণা নিয়ে কী হচ্ছে

প্রথম নিউজ, অনলাইন: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার দাবি ছিল অভ্যুত্থানকারীদের। সে লক্ষ্যে গত ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণা দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সরকারের হস্তক্ষেপে সেটি স্থগিত করতে হয়। সরকার সে সময় জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সরকার নিজেই জুলাই ঘোষণা দেবে। সে লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে কাজ করছে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো সেটি আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো জুলাই ঘোষণা নিয়ে সরকারকে চাপে রেখেছে। সরকার ইতিমধ্যে জুলাই ঘোষণার একটি খসড়াও তৈরি করেছে। যেটি পাঠানো হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। কিন্তু এ ঘোষণার খসড়ায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। এমতাবস্থায় ৫ই আগস্টের আগে জুলাই ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে সরকারের যে প্রতিশ্রুতি সেটি আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। শব্দগত জটিলতার পাশাপাশি সংবিধানের প্রস্তাবনায় এটি যুক্ত করার উদ্যোগেও একমত নয় বিএনপি।

দলটি চায় এটি চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করা হোক। এ ঘোষণা প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন- সরকার জুলাই ঘোষণা নিয়ে আন্তরিক। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি কোথাও আপত্তি দেখায় তাহলে এটি করা সরকারের জন্য মুশকিল। সরকার চায় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এ ঘোষণাটা দিতে। এমতাবস্থায় আগামী ৫ই আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির আগে সরকার জুলাই ঘোষণা দিতে পারবে কিনা সে বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সরকার এখন অপেক্ষা করছে জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের দিকে। 

জুলাই ঘোষণার জন্য সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। তারা ইতিমধ্যে একটি খসড়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকেও পাঠিয়েছে। যেখানে ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ’৫২-’র ভাষা আন্দোলন, ’৬২-’র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-’র গণ-অভ্যুত্থান, ’৭১-’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৭৫-’র ৭ই নভেম্বর, ’৯০-’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানসহ দেশের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের কথা গুরুত্বসহকারে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলায় হেফাজতের আন্দোলনে গণহত্যার কথাও আছে। তবে সরকার প্রণীত এ খসড়া ঘোষণাপত্রে কিছু শব্দগত মারপ্যাঁচ আছে বলে মনে করে কোনো কোনো দল। ইতিমধ্যে তারা সেটি সরকারকে জানিয়েছেও। এ ছাড়াও বিএনপি এ ঘোষণা সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত করার বিরোধী। দলটি চায় সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে কেবল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে যুক্ত করতে।

অন্যদিকে সরকার ও অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো মনে করে এটি যদি প্রস্তাবনায় যুক্ত করা না হয় তাহলে এটির গুরুত্ব লোপ পাবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্ব, মর্যাদা, মহিমা ধারণ করে। আমরা এটাকে স্বীকৃতি দিই, সারা জাতি এটাকে স্বীকৃতি দেয়। এটাকে আমরা যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে চাই। তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের চাওয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব নিয়েছে। কয়েকদিন আগে সরকারের এক উপদেষ্টা ঘোষণাপত্রের খসড়া বিএনপি মহাসচিবকে দিয়েছেন। বিএনপি এর আগে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি একটি খসড়া সরকারকে দিয়েছিল।

এরপর আর অগ্রগতি ছিল না। এবারের খসড়ায় বিএনপি’র আগে দেয়া মতামতের কিছু প্রতিফলন রয়েছে। বুধবার রাতে সরকারকে এবারের খসড়ায় মতামত জানানো হয়েছে। সালাহউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে ক্রান্তিকালীন বিধান-সংক্রান্ত সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার মামলায় পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিলকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। তাই অভ্যুত্থান-সংক্রান্ত জুলাই ঘোষণা চতুর্থ তফসিলে একটি অনুচ্ছেদে রেখে স্বীকৃতি দেয়া যৌক্তিক হবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে আরেকটি অনুচ্ছেদে বর্তমান সরকারের স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। তবে এ ধারণাকে নাকচ করে এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণা রাখতে হবে। এটি রাষ্ট্র পরিচালনার পাথেয়। জুলাই ঘোষণার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।