বিএনপি কি নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখছে?

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ ও মৌলিক সংস্কার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এনসিপি এবং জামায়াত নেতারা অনেকটা একই সুরে কথা বলছেন। আবার উভয় দলই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে অটল রয়েছে। যেটাকে আবার সমর্থন দিচ্ছে ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। খবর বিবিসি বাংলার।
বিএনপি ২০২৬ এ রোজার আগে ভোটের দাবিতে অনড়। কিন্তু জামায়াত এনসিপি মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন ও স্থানীয় নির্বাচন আগে করার বিষয়ে অনড়। এমন অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া নিয়ে কোনো সংশয় রয়েছে কি? এ বিষয়টি নিয়ে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি কি সংশয়ে রয়েছে?
বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে অনেকের মধ্যে শুরু থেকেই সংশয় আছে। গত পাঁচ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুন একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এর কিছুদিন পর থেকেই বিএনপি বলে আসছে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে।
প্রধান উপদেষ্টা যখন আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছিলেন, সেখানে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়ে এসেছে। তবে পরে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলে সেটায় একমত হওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি।
এই পুরো সময়ে অন্য অনেক দলের মতো জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচন নিয়ে নানা কথা বলেছে। দলটি শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার ডিসেম্বর থেকে জুনের সময়সীমাকে সাধুবাদ জানায়। বলে এই সময়সীমার যেকোনো মাসে নির্বাচন নিয়ে আপত্তি নেই জামায়াতের।
তবে দলটির অবস্থান এর পরেও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বিভিন্ন সময়। কখনো দলটি এই সময়সীমার মধ্যেই নির্দিষ্টভাবে এপ্রিল মাস, আবার কখনো ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেছে। যদিও দলটির নেতারা এসব বক্তব্যকে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে দলের অবস্থানের পরিবর্তন হিসেবে দেখতে নারাজ।
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি এনসিপি এখন ব্যস্ত ঢাকার বাইরে পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়ে। এসব কর্মসূচিতে দলটির নেতারা একাধিকবার বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও মৌলিক সংস্কার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না।
১১ জুলাইও যশোরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমরাও নির্বাচন চাই। তবে বিচার, সংস্কারসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দাবির প্যাকেজ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন চাই না। প্রয়োজনে এসব দাবি বাস্তবায়নে আরেকবার গণঅভ্যুত্থান ঘটনো হবে। যারা এর বিরোধিতা করবে তাদের লাল কার্ড দেখানো হবে।
এমতাবস্থায় এনসিপি কি ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য ভোট থেকে সরে দাঁড়াবে? নির্বাচনের সময় ইস্যুতে জামায়াত-এনসিপির অবস্থান অনেকটাই অভিন্ন। সার্বিক বিচারে বিএনপি কি নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে আছে?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সত্তর অনুচ্ছেদ কি কোনো ঠুনকো বিষয়? আমরা রাজি হইনি? প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না? আমরাই তো এখানে ১০ বছর মেয়াদ প্রস্তাব করেছি। এরকম ধরে ধরে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা দেখাতে পারবো যেগুলোতে আমরা সংশোধনী প্রস্তাব এনেছি কিংবা একমত হয়েছি।
তার ভাষ্য, এখন যদি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বা অন্য দলের প্রস্তাবে অযৌক্তিকভাবে শতভাগ একমত হতে বলা হয়, এমনকি অযৌক্তিকভাবে যেখানে সরকারের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ক্ষুণ্ন হবে রাষ্ট্র পরিচালনায়, সেখানেও যদি সবাইকে নিঃশর্ত রাজি হতে বলে সেটা তো সংস্কার হলো না।
বিএনপি তার অবস্থান স্পষ্ট করছে— সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়, যৌক্তিকও নয়। কিন্তু একে ঘিরে অন্য দলগুলোর যে বক্তব্য সেটা নিয়ে দলটির মূল্যায়ন কী?
সালাহউদ্দিন আহমদ অবশ্য মনে করছেন, এটা নির্বাচনের আগে দলগুলোর রাজনৈতিক দর কষাকষির অংশ।
তার মতে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা..রাজনৈতিকভাবে জনপ্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে হয়তো খুবই ক্ষুদ্র অংশের প্রতিনিধি। এখন তাদের একটা বড় চাওয়া-পাওয়া থাকতেই পারে। এগুলো হয়তো সেটারই অংশ। তাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য মাঠে একরকম থাকলেও আলোচনার টেবিলে কিন্তু আমরা ভিন্ন বক্তব্য পাই।