মমতার হুঁশিয়ারি: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি হেনস্থায় পশ্চিমবঙ্গ চুপ করে থাকবে না

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি হেনস্থার উদ্বেগজনক খবর আসছে। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে বাঙালি শ্রমিক কলোনির বাসিন্দাদের হেনস্থার মর্মন্তুদ কাহিনী সামনে এসেছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দেশেই বাংলার মানুষ যদি অনাহূত অতিথির মতো আচরণের শিকার হন, তাহলে আমরা চুপ করে থাকব না। পশ্চিমবঙ্গ সমস্ত নির্যাতিত কণ্ঠের পাশে দাঁড়াবে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সর্বত্র আওয়াজ তুলব।
মমতা অভিযোগ করেছেন,বাংলা-বিরোধী অপচেষ্টাকে দেশের নানা প্রান্তে শুরু করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশ থেকেও বাংলাভাষীদের উপর নিপীড়ন করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন সেই বিদ্বেষের ছায়া এসে পড়েছে দেশের রাজধানীতেও।
গত কয়েকদিনে নয়াদিল্লি বসন্তকুঞ্জের জয় হিন্দ শ্রমিক কলোনিতে বসবাসরত বাঙালিদের চরমভাবে হেনস্থা করেছে দিল্লি প্রশাসন। তাদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগেই আগে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে এবং বিদ্যুতের মিটার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দিল্লি প্রশাসনের এই সাম্প্রতিক কার্যকলাপকে বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা হিসেবেই দেখছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্টে মমতা লিখেছেন, নয়াদিল্লির বসন্তকুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনি থেকে উঠে আসা একের পর এক ভয়ঙ্কর হেনস্তার ঘটনার খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও বিচলিত। এই বসতি মূলত সেই বাংলাভাষী মানুষেরা তৈরি করেছেন, যারা দিল্লিকে গঠন করার অসংগঠিত শ্রমশক্তির গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ।
মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, আশ্রয়, পানি ও বিদ্যুৎ এই মৌলিক অধিকারগুলো যদি এইভাবে পদদলিত করা হয়, তাহলে আমরা কীভাবে নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলে দাবি করব?
তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে দেড় কোটিরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, যারা সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেন। কিন্তু বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে সেই কথা জোরের সঙ্গে বলা যায় না, যেখানে বাংলাভাষীদের নিজের দেশেই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেউ বাংলায় কথা বললে, তিনি বাংলাদেশি হয়ে যান না। ভাষা নির্বিশেষে তারা ভারতেরই নাগরিক, যেকোনো ভারতীয় নাগরিকের মতোই সমান অধিকারসম্পন্ন।
সম্প্রতি ওড়িশায় বঙালিদের ধরে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই সব আটক ব্যাক্তিদের অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক বলে দাবি করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। প্রতিবাদ জানিয়ে ওড়িশা সরকারের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা করা হয়েছে।
মমতা পোস্টে লিখেছেন, একপ্রকার জবরদস্তি উচ্ছেদ চলছে। যদিও এই বিষয়ে গত ডিসেম্বরেও একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দিল্লি পুলিশের হস্তক্ষেপের পর আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।