অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করতে যাচ্ছে পিকেকে

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: তুরস্কের বিরুদ্ধে ৪০ বছরের সশস্ত্র সংগ্রামের পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করতে যাচ্ছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি (পিকেকে)। অস্ত্র সমর্পণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা। কঠোর নিরাপত্তায় শুরু হবে এই নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া। যা পুরো গ্রীষ্মকাল ধরে চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া পিকেকে’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, ইরাকের কুর্দিস্তান প্রদেশে সুলেইমেনিয়াতে পিকেকে’র ছোট একটি দলের অস্ত্র সমপর্ণের মাধ্যমে নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। তুরস্কের কুর্দিপন্থী ডেম পার্টি ওই প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে। দেশটির গণমাধ্যমও সেখানে উপস্থিত থাকবে। তুরস্ক, ইরাক ও কুর্দিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের অংশগ্রহণে স্থাপিত পয়েন্টগুলোতে আগামী কয়েক মাস নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
এক ভিডিওতে পিকেকে’র দীর্ঘ সময় ধরে কারাবন্দি নেতা আব্দুল্লাহ ওকালান বলেন, সশস্ত্র সংগ্রামের পর্যায় থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের পর্যায়ে এটি একটি সেচ্ছাসেবী রূপান্তর। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে ইমরালি দ্বীপে নির্জন কারাবাসে আছেন। উল্লেখ্য, তুরস্ক ও পিকেকে’র মধ্যে এটিই প্রথম শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা নয়। এর আগেও এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে এবার আশা করা হচ্ছে যে, ১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া দীর্ঘ সংঘাতের অবসান হবে।
পিকেকে তুরস্কের ভেতর স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অস্ত্র তুলে নেয়। ২০১৩ সালে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন আব্দুল্লাহ ওকালান। ওই সময় তিনি পিকেকে’কে তুরস্ক থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। ২০১৫ সালের ডলমাবাহচে চুক্তির উদ্দেশ্য ছিলো কুর্দিদেরকে গণতান্ত্রিক ও ভাষার অধিকার দেয়া। তবে ভয়াবহ সহিংসতার মাঝে ওই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পড়ে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে একজন জাতীয়বাদী নেতা ও এরদোগানের মিত্র ডেভলেট বাচেলি সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক গঠনের এক প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি কারাবন্দি নেতা ওকালানকে পিকেকে নিষিদ্ধের জন্য আহ্বান জানান। আরও বলেন, এটি ইমরালি দ্বীপ থেকে তার মুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে। তুরস্কের সরকার ডেম পার্টির মাধ্যমে ওকালানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে পিকেকে ভেঙে দেয়ার ঐতিহাসিক আবেদন আসে ওকালানের কাছ থেকে। যা ডেম পার্টির দুই এমপি দ্বীপ থেকে আসার পর পড়ে শোনান। ওকালানের চিঠিতে লেখা ছিলো, সকল পক্ষকে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। পিকেকে’র নিজেদের বিলুপ্ত করতে হবে। ওকালানের নির্দেশ মেনে নিয়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় পিকেকে। পরবর্তীতে ঘোষণা দেয়, গোষ্ঠীটি তাদের ঐতিহাসিক মিশন সম্পূর্ণ করেছে।
আরও বলা হয়েছে, কুর্দিদের ইস্যুটি এখন গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এ বিষয়ে এরদোগান বলেছেন, সন্ত্রাসের প্রাচীর ভেঙে ফেলার দিকে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। ২৬ বছর নির্জন কারাবাসে থাকার পরও বহু তুর্কি এখনও ওকালানের নিন্দা করছেন। তবে কুর্দিদের কাছে এখনও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।
৪১ বছর দীর্ঘ ওই যুদ্ধের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জুস্ট জোনার্দান বলেন, আমার মনে হয় তিনি এখনও অনেক কুর্দিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরুর দুই দিন আগে ওকালানকে এক ভিডিওতে দেখা যায়। যা ২০ বছর আগে তার কারাবন্দি হওয়ার পর এই প্রথম।