Ad0111

টিকা সনদে আপত্তি মালিকদের, চান না অর্ধেক যাত্রী পরিবহন

টিকা সনদে এই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত বিভিন্নখাতের আর্থিক ক্ষতি বাড়াবে।

টিকা সনদে আপত্তি মালিকদের, চান না অর্ধেক যাত্রী পরিবহন
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বেসরকারি ক্ষেত্রে সেবা নিতে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে গণপরিবহনে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু টিকা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন গণপরিবহন ও দোকান মালিকরা। তারা জানিয়েছেন, এখনো দেশের মানুষের বড় অংশকে টিকা দেওয়া যায়নি। তাই এই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত বিভিন্নখাতের আর্থিক ক্ষতি বাড়াবে। দেশের জনগণের বড় অংশের টিকা নিশ্চিতের মাধ্যমে কমপক্ষে আরও ছয় মাস পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকরা।

একই সঙ্গে গণপরিবহনে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনও করতে চান না বাস ও লঞ্চ মালিকরা। তারা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে ভাড়া এমনিতেই বেড়ে গেছে। এরপর গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে ভাড়া আরও বাড়বে, যেটা সাধারণ মানুষ বহন করতে পারবে না। বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে পরিবহন ব্যবসা।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বব্যাপী দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। রোববার পর্যন্ত বাংলাদেশে ২১ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে দেশে দৈনিক শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ফের দেড় হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও বাড়তে বাড়তে ছয় শতাংশের বেশি গিয়ে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে গত ৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানে করোনা মোকাবিলায় নানা ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটির মতো। তাদের মধ্যে সাড়ে সাত কোটির বেশি মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন পাঁচ কোটি ৪০ লাখের মতো। এছাড়া বুস্টার ডোজও শুরু হয়েছে।

সংক্রমণ বাড়তে থাকার মধ্যে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন থেকে রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, প্লেন, ট্রেন ও লঞ্চে যারা উঠবে তাদের একটা টাইম দিয়ে, ডাবল ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ যেন না উঠে, সেরকম একটা চিন্তা-ভাবনার দিকে যেতে হবে। ‘(রেস্টুরেন্ট, শপিংমলে প্রবেশ এবং প্লেন, ট্রেন ও লঞ্চে) ওঠার ক্ষেত্রে ডাবল ভ্যাকসিনেশনের একটা ইমপোজিশন (টিকার দু-ডোজ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ) আসছে। কবে থেকে এটা কার্যকর করা হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘একটা সময় দেওয়া হবে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা টাইম দিয়ে এটা করা হবে। ওমিক্রম ঠেকাতে গেলে স্ট্রিক্ট ভিউতে আপনাতে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা (সেবা নিতে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা) অলরেডি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে সময় দিয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা অর্ডার করে দিচ্ছি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘করোনার টিকা না নিলে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না—এমন কোনো নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তখন আমাদের পদক্ষেপ জানাবো। তিনি বলেন, ‘তবে এই মুহূর্তে টিকার সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন না করা ও পরিবহনের অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অনেক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তো আমাদের না মেনেও উপায় নেই।

লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন-যাপ) সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা ঠিক হবে না। আমাদের জানামতে এখনো ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা নেয়নি। আমরা আমাদের মতো করে যাত্রীদের জরিপ চালাচ্ছি। যাত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে—টিকা নিয়েছেন কি না, সনদ আছে কি না। দেখলাম ডেকের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ এখনো টিকা নেননি। তবে কেবিনের যাত্রীদের টিকা নেওয়ার হার বেশি। তিনি বলেন, ‘সরকার আগে মানুষের টিকা নিশ্চিত করুক, তারপর না হয় সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে টিকা বাধ্যতামূলক করুক।

বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘সরকার যদি আবার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে ভাড়াও বাড়বে। এমনিতেই তেলের দাম বাড়ার কারণে ভাড়া বেশি। মানুষের পকেট খালি। অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কারণে ফের অতিরিক্ত ভাড়া বহন করতে পারবে না লোকজন। তখন যাত্রীই পাওয়া যাবে না। তখন একেবারে লঞ্চ বন্ধ করে রাখা মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এখনই তো যাত্রী অনেক কম। এই লঞ্চ মালিক আরও বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলেছি, যে সিদ্ধান্তই নেবেন আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নেবেন বলে আশা করি।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা দেশের ১০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পারিনি। সেখানে যদি টিকা নেওয়ার সনদ দিয়ে সব করতে হয় সেটা তো হয় না। করোনা মোকাবিলায় সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভালো, তবে টিকার দেওয়ার পরিধি আরও বাড়িয়ে তারপর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যেতে হবে।আরও ছয়মাস পর সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যাওয়া উচিত জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের টিকা নিশ্চিত করা গেলে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘ওমিক্রম মোকাবিলায় বিধিনিষেধ দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই যথেষ্ট। আমরা মানুষকে সচেতন করার কাজ করছি। নতুন ব্যানার লাগানো হচ্ছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news