ঢাকায় আদানির প্রতিনিধিদল, রামপাল-পায়রার দামেই বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি
আদানি পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এবং পরে বিদ্যুৎ–সচিব হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সিদ্ধান্ত জানায়।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: রামপাল ও পায়রার মতো একই দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারতের আদানি পাওয়ার। তারা বলেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে দামে কয়লা আমদানি করা হয়, আদানিও একই দামে আমদানি করবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দামও একই রকম হবে। এটা সামান্য এদিক-ওদিক হলেও তা খুব বেশি হেরফের হবে না। আদানি পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এবং পরে বিদ্যুৎ–সচিব হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সিদ্ধান্ত জানায়। আদানি গ্রুপের বাংলাদেশ কার্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। জানতে চাইলে বিদ্যুৎ–সচিব হাবিবুর রহমানও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আগামী মার্চে চালু হতে পারে ভারতের ঝাড়খন্ড প্রদেশের গোড্ডা জেলায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি নির্মাণ করছে আদানি গ্রুপের কোম্পানি আদানি পাওয়ার। চুক্তি অনুসারে এটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনে নেবে পিডিবি। তবে উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি তোলে পিডিবি। এটি নিয়ে আলোচনা করতে গত ২৫ জানুয়ারি আদানিকে চিঠি দিয়ে প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুরোধ করা হয়।
একাধিক সূত্র বলছে, ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পিডিবির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ শুরু করে আদানি পাওয়ার। কয়েক দফা ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা হয়। তারা রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম, ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দামের তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর আগামী এক বছরের প্রক্ষেপণ করে তারা কয়লা আমদানি ও বিদ্যুতের দাম নিয়ে একটি কাঠামোগত প্রস্তাব তৈরি করে। এটা নিয়েও পিডিবির সঙ্গে আলোচনা করেছেন আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তারা। এরপর আজ বৈঠকে এটি তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন।
আদানি বাংলাদেশ সূত্র বলছে, বেলা একটার দিকে ভারত থেকে আদানি পাওয়ারের চারজনের একটি প্রতিনিধিদল আসে। রাত ১০টার দিকে তাঁরা আবার ভারতে ফিরে গেছেন। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তাঁরা প্রথমে পিডিবির কারিগরি দল ও পরে পিডিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আদানি পাওয়ারের আরও তিনজন কর্মকর্তা যোগ দেন। বৈঠক শেষে চারজনের একটি প্রতিনিধিদল বিদ্যুৎ–সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে বৈঠকে কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। আদানির নতুন প্রস্তাব নিয়ে আরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বিদ্যুৎ বিভাগ।
সরকার অনুমোদিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে পিডিবি। এ চুক্তিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম উল্লেখ না থাকলেও একটি সূত্র দেওয়া থাকে। এ সূত্র অনুসারে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) নির্ধারিত থাকে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও এটি দিতে হয়, না করলেও দিতে হয়। আর পরিচালন ও জ্বালানি খরচের বিষয়টি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি কিনে ব্যবহার করলেও তার ক্রয় রসিদ দেখে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে জ্বালানি মূল্য পরিশোধ করতে হয় পিডিবিকে। জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দামও বেড়ে যায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কয়লার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া (নিউক্যাসল ইনডেক্স) ও ইন্দোনেশিয়া ইনডেক্স (সূচক) মানা হয়। এ দেশ দুটি বিশ্বে কয়লার বড় রপ্তানিকারক। তাদের কয়লার দাম নিয়মিত অনলাইন সূচকে প্রকাশ করা হয়। তবে এ দামের আড়ালে কয়লার দামে বিশেষ ছাড় থাকে। কয়লা কেনার সময় সমঝোতার ওপর ছাড়ের বিষয়টি নির্ভর করে।
২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে সরকার। ওই সময় দেশে আমদানি করা কয়লা থেকে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়নি। তাই কয়লা আমদানির বিষয়ে তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। দেশে ২০২০ সাল থেকে পায়রা ও গত মাসে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এতে কয়লা আমদানির বিষয়ে এখন পিডিবির একটা ধারণা হয়েছে। এখন কয়লা আমদানি, দাম নিয়ে কৌশল ঠিক করতে বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি কাজ করছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: