শীতেই যদি এই দশা হয়, তাহলে গরমের মৌসুমে কী হবে?

একসময় ভুলতে বসা লোডশেডিং গত জুলাই মাসে ঘোষণা দিয়ে আবার ফিরে আসে।

শীতেই যদি এই দশা হয়, তাহলে গরমের মৌসুমে কী হবে?
শীতেই যদি এই দশা হয়, তাহলে গরমের মৌসুমে কী হবে?

প্রথম নিউজ, ডেস্ক: প্রচণ্ড শীতেও এতো লোডশেডিং! বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে দিনে ছয় থেকে সাতশ’ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দেশের কোনো কোনো এলাকায় দিনে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রাহকরা বলছেন, শীতেই যদি এই দশা হয়, তাহলে গরমের মৌসুমে কী হবে? রমজান ও সেচের  কাজ কীভাবে চলবে। তা নিয়ে শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা। যদিও কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, শিগগিরই কেটে যাবে সংকট। শীত মৌসুমে তুলনামূলক কম বিদ্যুৎ চাহিদার সময়ও চলছে লোডশেডিং। ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখের পর থেকে দেশে ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

একসময় ভুলতে বসা লোডশেডিং গত জুলাই মাসে ঘোষণা দিয়ে আবার ফিরে আসে। সে সময় বলা হয়েছিল, অক্টোবরে শীত মৌসুমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। হয়েছেও তাই। তবে ভরা শীতে আবারো ফিরেছে লোডশেডিং। যা গ্রাহকদের ভাবিয়ে তুলেছে গরমে কী হবে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শীতে বিদ্যুৎ তেমন ব্যবহার করা হয় না। তাই বিদ্যুতের ঘাটতিটা বোঝা যাচ্ছে না।  শীত মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন বিদ্যুৎ চাহিদা ৯ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ৯ হাজারের কিছু বেশি। বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন বিদ্যুতের উৎপাদন ও পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯শে জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১০ হাজারের একটু বেশি। সর্বনিম্ন উৎপাদন হয় ৬ হাজার ৬৯৫ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১০ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। যদিও উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। 

সংকট স্বীকার করে দায়িত্বশীলরা বলছেন, কয়লার অভাবে একদিকে রামপাল আর অন্যদিকে পায়রা থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ মিলছে না। আবার ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় কয়লার আমদানিও হচ্ছে না পর্যাপ্ত। যে কারণে লোডশেডিং হচ্ছে সারা দেশেই। এদিকে, আসছে এপ্রিলে গরমকাল, এর সঙ্গে যুক্ত হবে রমজান। উৎপাদন পরিস্থিতি এমন থাকলে সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। যদিও এই পরিস্থিতি কেটে যাবে- এমন আশা করছেন কর্মকর্তারা।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেটি দিতে পারছে না। প্রাথমিক জ্বালানির অভাব, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া এমন পরিস্থিতিতে লোডশেডিং করা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা। গ্যাস খাতে আমরা দেখেছিলাম যে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করে ঘাটতি বা ভর্তুকি মোকাবিলা করা যায়। তো বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি ভর্তুকি সমন্বয় করে যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এ খাতে কোনো সাশ্রয় হয়নি; বরং বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, একদিকে গ্যাস নেই, অন্যদিকে কয়লাও নেই। আবার এসব কেনার জন্যও নেই পর্যাপ্ত ডলার। সংকট কাটাতে গ্যাস বা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোই একমাত্র সমাধান নয় বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

ভরা শীতেও বিদ্যুতের লোডশেডিং কেন জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, আমরা চাই কম দামের জিনিস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। কিন্তু তা করতে গিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, কয়লা দিয়ে উৎপাদনে কিছুটা ব্যাহত হয়েছে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। কারণ এলসি খোলায় একটু জটিলতা তৈরি হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।  বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন ব্যয় কমাতে জ্বালানি তেলচালিত বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই কয়লা ও গ্যাসচালিত তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল। গড়ে ওই সময় ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। এখন শীতের সময় বিদ্যুতের চাহিদা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াটে। অথচ এটা সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: