আলুর ভর্তা ভাত আবার কেও চাল ভাজা দিয়ে সারছেন ইফতার

নিম্ন্নবিত্তের মানুষ ইফতারি কিনতে নাভিশ্বাস হয়ে পড়ছে। এবারে ইফতারি কিনতে অনিহা দেখাচ্ছেন নিম্নবিত্তের মানুষ। অনেকে আলু ভর্তা আর ভাত দিয়ে ইফতারি সেরে নিচ্ছেন।

আলুর ভর্তা ভাত আবার কেও চাল ভাজা দিয়ে সারছেন ইফতার
আলুর ভর্তা ভাত আবার কেও চাল ভাজা দিয়ে সারছেন ইফতার

প্রথম নিউজ, মেহেরপুর: রোজার প্রথম দিনে মেহেরপুরে ইফতারি সামগ্রীর দাম দ্বিগুণ। নিম্ন্নবিত্তের মানুষ ইফতারি কিনতে নাভিশ্বাস হয়ে পড়ছে। এবারে ইফতারি কিনতে অনিহা দেখাচ্ছেন নিম্নবিত্তের মানুষ। অনেকে আলু ভর্তা আর ভাত দিয়ে ইফতারি সেরে নিচ্ছেন। এমনই একজন নারী শ্রমিক তহরা খাতুন (৪৮)। তিনি মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে হাড়িয়াদহ গ্রামে বসবাস করেন।  এক মেয়ে সন্তান রেখে স্বামী তাকে তালাক দেয়। সে থেকে এক কন্যাসন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে মরিচ তোলাসহ ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন।  মেয়ের বিয়ে হলেও তালাকপ্রাপ্ত হয়ে বাড়িতে রয়েছে। 

এই নারী শ্রমিক বলেন, ‘প্রতিদিন কাজ পাইনা বল্লেই চলে। যদি বা কেউ কাজে নেয়। মজুরি দেয় ২০০ টাকা। ওই টাকা দিয়ে  চাল-ডাল আর তরিতরকারি কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। তাই এতো চড়া দামে ইফতারি কিনবো কি করে। আলু ভর্তা আর ভাত দিয়ে ইফতারি করলাম।’ একই কথা বল্লেন ওই গ্রামে দিনমজুর হবিবর রহমান। তিনি জানান, ‘জিনিসপাতির যে দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষের বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়বে।’ এদিকে, মেহেরপুর জেলা শহরসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ইফতারি সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে অন্য মৌসুমের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। কোনো কোনো সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে তিনগুণ বেশি দামে। মাল্টা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা । যা গত রোজায় বিক্রি হতো ১৫০ টাকা কেজি। এছাড়াও  কেজি প্রতি সৌদি খেজুর ৬০০ টাকা, কাঠ বাদাম ৮০০ টাকা, কিসমিস ৫০০ টাকা, কমলা ২০০ টাকা, চায়না কমলা ২৫০ টাকা, বেদানা ৩৫০ টাকা, আঙ্গুর ২৫০ টাকা, আজুয়া খেজুর ৭০০ টাকা, আলুর চপ পিচ প্রতি ১৫ টাকা, সিঙাড়া ১৫টাকা। যা গত রোজায় চপ ও সিঙাড়ার পিস প্রতি দাম ছিল ৫ টাকা। মেহেরপুরে গত কয়েক বছর ধরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। প্রতি কেজি তরমুজের দাম ধরা হচ্ছে ৮০টাকা। হত-দরিদ্রের জন্য টিসিবি’র কম মূল্যেই খাদ্যসামগ্রী কিনতে গিয়েও পাচ্ছে না হত-দরিদ্ররা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে এসব খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছে মধ্যবিত্তরা।  এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হলেও মনিটরিংটিম বাজার থেকে সরে আসলে, আবার চড়া মূল্য খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী: হাতে নেই কাজ, ঘরে নেই জমানো টাকা। শুরু হয়েছে রমজান। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কয়েক দফা বাড়ার পর কুলকিনারা হারিয়ে ফেলেছে চিলমারীর প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। বেশির ভাগ মানুষের ভাগ্যে সেহ্‌রিতে জোটেনি ভালো খাবার। ইফতারে ছিল চাল ভাজা, গুড়, শাক আর মোটা চালের ভাত।  রোজা শুরু হলেও বাজারে নেই কোলাহল। ক্রেতা কমে যাওয়ায় বিপাকে ব্যবসায়ীরাও। কুড়িগ্রামের চিলমারী নদীভাঙন কবলিত এলাকা। এখানে ৮০ ভাগ মানুষ দিনমজুর ও কৃষির উপর নির্ভরশীল। হাতে কাজ জুটলে ঘরে খাবার জোটে। এর উপর দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন চাপে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেছে তারা।

এরপর খুশির রমজান যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’- হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাখাহাতি চরের বিজলি, রহিমা, ফেরদৌস বলেন- ‘দিন আনি দিন খাই। এর উপর জিনিসের দাম খালি বাড়ে। রোজা তো শুরু হইলো, তাতে আরও বাড়ি গেইছে সইকগুলের দাম। হামরা তো কোনো কিনারা পাচ্ছি না। ভাত শাক খাইয়া রোজা থামক। আর পানি দিয়ে রোজা ভাঙ্গিমো।’ শুধু  ফেরদৌস, রহিমা নন, শতশত পরিবার দ্রব্যমূল্যের চাপে পড়ে সুস্বাদু ও আধুনিক খাবারের স্বপ্ন দেখতেও ভুলে গেছে। সরজমিন ভটরপাড়া, সাতঘরিপাড়াসহ বাঁধ এলাকা ঘুরে মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইফতারে  খেজুর, ফল-ফলাদি, ছোলা,  পিয়াজু, বেগুনী, নিমকি ও জিলাপির মুখরোচক খাবার পুরো রমজানে কোনোদিনই  খেতে পারবেন কিনা তারা সন্দিহান। 

আমানুল্লাহ ও ফাতেমা স্বামী-স্ত্রী। তারা বলেন, সেহ্‌রিতে আলু আর সামান্য ভাত খেয়ে রোজা রেখেছেন। রোজা অবস্থায় সকালে তিস্তার জেগে ওঠা চরে গিয়েছিলেন ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে।  বেলা ১২ টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন ঘাসের বস্তা নিয়ে। অশ্রুসিক্ত হয়ে ফাতেমা বলেন, ‘কি আর কমুরে বাপো, জিনিসপত্রের যে দাম। খালি বাড়বের নাগছে। ভালো খাবার তো দূরের কথা, ইফতার হামরা পানি দিয়ে সারিনিমো।’ এখই এলাকায় বাঁধের উপার বাস জেলেখা ও সুফিয়ার রোজা রেখেছেন ভাত আর ডিম ভর্তা খেয়ে আর ইফতার করবেন চাল ভাজা দিয়ে। তারা বলেন, ‘তেলের যে দাম হাফ লিটারের বদলে একন ১ ছটাক কিনি, কষ্ট হলে কি হইবে রোজা তো আর ছাড়া যাবে না।’  জহিরন সারা দিন অন্যের বাড়ির কাজকর্ম করে দিলে এক-দেড়সের চাল পায়। তা দিয়ে ভাতের যোগাড় হয়। তার কাছে রমজানে ইফতারে সুস্বাদু খাবার যেন স্বপ্নের মতো। 

থানাহাট বাজারে মুরগি ব্যবসায়ী আনোয়ারুল বলেন, হু হু করে দাম বাড়ছে। রমজানকে কেন্দ্র করে আরও বেড়েছে। ৭০ ভাগ ক্রেতা কমে গেছে। তিনি বলেন, আগে যেখানে পহেলা রমজানে প্রায় ৭ মণ মুরগি ও মাংস বিক্রি করেছিলাম। এবারে পহেলা রমজানে ২ মণও বিক্রি করতে পারিনি। একই অবস্থা মাছ বাজারেও।  মাছ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। 

রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদ  চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা জানান, এই ইউনিয়নের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। এদের দৈনন্দিন জীবন চালানোই কষ্টকর। উন্নতমানের খাবার পাবে কোথায়? অধিকাংশ মানুষ একবেলা পান্তা, একবেলা গরম ভাত  খেয়ে দিনাতিপাত করে। আর ইফতারে বেশির ভাগ মানুষ চাল ভাজা বা চালের গুঁড়া আবার কেউ ইফতার করে শাক-ভাত খাবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: