রোজার প্রথম দিনে সবজির দামে রেকর্ড

রোজা শুরুর প্রথম দিনে সবজির বাজারে অরাজকতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া অতিপ্রয়োজনীয় বেশকিছু খাদ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।

রোজার প্রথম দিনে সবজির দামে রেকর্ড
রোজার প্রথম দিনে সবজির দামে রেকর্ড

প্রথম নিউজ, অনলাইন: রোজা শুরুর প্রথম দিনে সবজির বাজারে অরাজকতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া অতিপ্রয়োজনীয় বেশকিছু খাদ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। পণ্যের চাহিদা থাকায় দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা কয়েকগুণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো- লেবু, শসা, ধনেপাতা, বেগুন ও ছোলা  রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় লেবু হালি ৫০ টাকা, আর ডজন ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ বাজারে ধনেপাতার আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। অন্যদিকে, কয়েক মাস ধরে গরু ও খাসির মাংস সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে রেকর্ড গড়লেও রমজানের শুরুর দিন কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে ব্রয়লারের দাম। সবজির বাজারেও আগুন। সবজি ও মাছের অসহনীয় মূল্যে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের।

বাজারে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সবজির দাম। বিশেষ করে বেগুন, লেবু, শসা, টমেটো, ধনেপাতা, কাঁচামরিচসহ ইফতারিতে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে অত্যধিক। বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে লম্বা বেগুনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর এই বেগুনগুলোর ভালো মানেরটা প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বাকিগুলো মানভেদে ৮০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া সবুজ ও বেগুনি রঙের গোল বেগুনগুলো ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসা বেসরকারি চাকুরিজীবী আকতার বলেন, গত বৃহস্পতিবার ৫০ টাকা দামে শসা কিনলাম না। আজ (শুক্রবার) ৮০ টাকা। ৬০ টাকার বেগুন ১০০ টাকা। এক পিস লেবু ১৫ টাকা। আগে লেবু ডজন কিনতাম, এরপর কিছুদিন ধরে হালি কিনছি। দাম বাড়ায় এক পিস কিনতে হচ্ছে। 
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২৩শে মার্চ ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি লাল বেগুন বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ থেকে ৬৫ টাকা। এ ছাড়া এক মাস আগে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। পাশাপাশি গত বছর এই সময়ে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। ফলে এক বছরে ২৭.২৭ শতাংশ বেড়েছে বেগুনের দাম।

কাঁচামরিচ বৃহস্পতিবারও ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার খুচরা বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বলে জানিয়েছেন একজন পাইকারি ব্যবসায়ী। বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ৯০-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ্যাংকার ডাল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, মাষকলাইয়ের ডাল ১৫০ টাকা, মুগডাল ১১০ টাকা। তবে দাম বেড়েছে খেসারি ডালের দাম। গত সপ্তাহে খেসারি ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা কেজিতে। বেসন বিক্রি হচ্ছে ডালভেদে ৯৫ কেজি ১২০ টাকা। বুটের ডালের বেসন ৯৫ টাকা ও মুগ ডালের বেসন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। রমজানের প্রথম দিনে বেশ বেড়েছে মাছের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার পর থেকেই মাছের দামে পরিবর্তন এসেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন আড়তে মাছের দাম বাড়ছে।

বাজারে চাষের রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকায়। তেলাপিয়া ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। এসব মাছের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশি পদের (উন্মুক্ত জলাশয়) মাছের দাম। এখন মলা ৫০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, ছোট আকারের টেংরা ৫০০, আর বড় আকারের ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আকারভেদে চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ এবং গলদা ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতারা বলেন, দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ মাংস খেতে পারছেন না। যে কারণে মাছের ওপর প্রভাব বাড়ছে, এজন্য মাছের দাম বেড়েছে। শেষ এক সপ্তাহে সব ধরনের মাছের দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ টাকার পর্যন্ত কমেছে। পোল্ট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান খামার পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯০-১৯৫ টাকা কেজি নির্ধারণের পরেই বাজারে এমন নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেল। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা দরে। যা আগের দিন ২৭০-২৮০ টাকা ছিল। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। আর খাসির মাংসের দাম ১১০০-১২০০ টাকা কেজি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: