Ad0111

মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ : চাষ শিখতে ৩০ কর্তার চীন ভারত ও থাই ভ্রমণ

পরামর্শকের মাসে বেতন পৌনে ৩ লাখ টাকা; বিদেশে বাজার খুঁজতেই যাবে ৩ কোটি টাকা; প্রতিজনে বিদেশ ভ্রমণে খরচ ৪ লাখ টাকা

মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ : চাষ শিখতে ৩০ কর্তার চীন ভারত ও থাই ভ্রমণ
মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ : চাষ শিখতে ৩০ কর্তার চীন ভারত ও থাই ভ্রমণ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: মূলত উন্নয়ন প্রকল্প মানেই কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের একটি সুযোগ। প্রয়োজন থাক বা না থাক বিদেশ ভ্রমণ খাত প্রকল্পে থাকতেই হবে। ঘাস চাষের পর এবার মাশরুম চাষের সম্প্রসারণ শিখতে ৩০ কর্মকর্তারা ভারত, চীন ও থাইল্যান্ড ভ্রমণে যাবেন। তাদের প্রতিজনে খরচ হবে চার লাখ টাকা। আর এই প্রকল্পে দু’জন পরামর্শকের পেছনে খরচ ধরা হয়েছে দুই কোটি ৯১ লাখ টাকা। উৎপাদিত মাশরুমের আন্তর্জাতিক বাজার খুঁজতেই খরচ তিন কোটি টাকা। আর এসব খরচ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তারা এই খাতভিত্তিক ব্যয়গুলোতে যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্য বলেছে কৃষি মন্ত্রণালয়কে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাশরুম একটি অসীম সম্ভাবনাময় ফসল। কারণ মাশরুম একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবার; যা চাষ করার জন্য কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। এ দেশে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ কোটি মেট্রিক টন খড় উৎপন্ন হয়।

এই খড়ের মাত্র ১৫ শতাংশও যদি মাশরুম চায়ে ব্যয় করা হয় তাহলে জিডিপিতে দানাশস্য থেকে যে পরিমাণ অবদান আসে, তার চেয়ে বেশি অবদান আসবে মাশরুম থেকে। মাশরুম চাষের জন্য দেশে বড় বড় ফার্ম গড়ে উঠেছে। বর্তমানে দেড় লাখ মানুষ এই মাশরুম উৎপাদন ও বিপণনের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত। বছরে এখন প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে; যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ‘পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। যার জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। চলতি বছর অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি আগামী ২০২৬ সালের জুনে শেষ হবে। 

প্রকল্পের মূল কাজ হলো- উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, চাষিদের প্রশিক্ষণ, চার হাজার ছাদবাগানিদের প্রশিক্ষণ, ৩৭শ’ ব্যাচে রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ, ৩৫০ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, ৯ ব্যাচে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ, ১৫ ব্যাচে সিনিয়র কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ৩০০ জন জিও, এনজিও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ৩০ জন কর্মকর্তাকে বিদেশ প্রশিক্ষণ। ৯২৫টি মাঠ দিবস, পাঁচটি মাশরুম মেলা, ৭০ ব্যাচে উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ। ৩৭৫টি ছাদ প্রদর্শনী, ৯২৫টি স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী। ডরমেটরি ভবণ সম্প্রসারণ, ল্যাব কাম অফিস ভবন সম্প্রসারণ, ওয়ার্কশপ কাম ল্যাব ভবন সম্প্রসারণ, ল্যাবরেটরি ভবন, অভ্যন্তরীণ সদন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা। ৪৩টি কালচার হাউজ, ৪৪টি ভার্মি কম্পোট ইউনিট নির্মাণ, ৭০টি আঞ্চলিক ও পাঁচটি জাতীয় সেমিনার করা। ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, চাষি, উদ্যোক্তা ও কৃষি কর্মকর্তাদের স্থানীয় প্রশিক্ষণের জন্য ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এই ব্যয় যৌক্তিকপর্যায়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। মাশরুম গবেষণার সাথে যুক্ত ৩০ কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। অভিজ্ঞতা অর্জনে তারা চীন, ভারত ও থাইল্যান্ডে যাবেন। এতে খরচ হবে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। জনপ্রতি খরচ হচ্ছে চার লাখ টাকা।

এই প্রকল্পের জন্য দু’জন পরামর্শক রাখা হচ্ছে। যাদের মধ্যে একজন মাশরুম বিশেষজ্ঞ। মনিটরিং করতে অন্যজন। তাদের এক একজনের মেয়াদ ৫৪ মাস। খরচ ধরা হয়েছে দুই কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে অর্থ বিভাগের জনবল কমিটিও তাদেরকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুপারিশ করেছে বলে কমিশন জানায়। প্রতিজনের জন্য প্রতি মাসে খরচ হবে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা; অর্থাৎ মাসে পরামর্শক খাতে খরচ পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২৭ হাজার ৭৫০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে দুই দিনের। এ জন্য খরচ হবে ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি জনে ব্যয় চার হাজার ২০০ টাকা। আর উদ্যোক্তা তৈরিতে খরচ হবে এক কোটি ৬৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। জনপ্রতি খরচ ১৮ হাজার টাকা। ১২ হাজার ছাদবাগান চাষিদের প্রশিক্ষণে যাতে তিন কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আড়াই হাজার টাকার বেশি ব্যয় হবে প্রতিজনের পেছনে। রিফ্রেশার প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় কোটি ৬৬ লাখ টাকা। দুই হাজার ৩০০ টাকা করে ব্যয় হবে জনপ্রতি।

এক হাজার ৩০০টি প্রদর্শনীর জন্য খরচ হবে ৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রতিটির খরচ গড়ে তিন লাখ ৩২ হাজার টাকা। ২০০৯ সালে নির্মিত ভবন মেরামতের জন্য আট কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে; কারণ ওই ভবন নির্মাণের পর আর মেরামত করা হয়নি। কৃষি পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম প্রধানের মতে, প্রতিটি ব্যয়কে যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। এখানে মেরামত ও সংরক্ষণ খাতে সাত কোটি ৯৯ লাখ টাকা, প্রচার ও বিজ্ঞাপনে দুই কোটি টাকা, ভিডিও ডকুমেন্টেশন খাতে আড়াই কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ দুই কোটি টাকা, ল্যাব যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, এয়ারকুলার ইত্যাদি খাতে ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া ক্রয় পরিকল্পনায় ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ বেশ কিছু সংশোধন করার প্রয়োজন আছে। এই ক্রয় পরিকল্পনাকে পিপিআর-২০০৮ এবং পিপিএ-২০০৬ অনুযায়ী প্রণয়ন করা আবশ্যক।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news