মাথা গোঁজার ঠাঁই চান শহীদ নাজমুলের মা

প্রথম নিউজ, সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা): ভূমিহীন ও অতিদরিদ্র পরিবারের যুবক নাজমুল হাসান (২৩)। বাবাকে হারিয়ে হাল ধরেন সংসারের। জীবিকার তাগিদে কাজ করেন পোশাক শ্রমিকের। এখান থেকে স্বপ্ন দেখছিলেন কয়েকশতক বসতভিটা কেনার। সেখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবেন মা গোলেভান বেওয়াকে নিয়ে। এরইমধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন নাজমুল। আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। দেশে শান্তি আসলেও আজও কান্না থামেনি নাজমুলের মায়ের। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। অন্যের জমিতে কোনোমতে বসবাস তার। এখন রাষ্ট্রীয় বা কোনো দানশীল ব্যক্তির কাছে একটি বসতভিটার আকুতি জানিয়েছেন শহীদ নাজমুলের মা গোলেভান বেওয়া।
সূত্রমতে, অতিদরিদ্র পরিবারের একমাত্র ছেলে নাজমুল। তার রিকশাচালক বাবা হাইদুল ইসলাম দুই বছর আগে মারা গেছেন। সেই থেকে মা গোলেভান বেওয়া আর ছোট দুই বোন হীরা মণি ও আয়শা খাতুনকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেন নাজমুল। জীবিকার তাগিদে ঢাকার আশুলিয়া এলাকার সিয়াম গার্মেন্টেসে চাকরি করছিলেন। গত বছরের ৪ঠা আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেই গুলি ঢোকে তার পেটের ডান পাশে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ই আগস্ট সন্ধ্যার পর মারা যায় নাজমুল। এরপর ধারদেনা করে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে ১০ই আগস্ট সকালে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
শহীদ নাজমুল হাসানের বোনজামাই আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে ভাইটির মৃত্যুর পর শাশুড়ি তার অস্থায়ী বাড়িতে একাই হয়ে পড়েন। তাকে কিছুটা সহযোগিতা করতে তখন থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এ বাড়িতে বসবাস করছি। গোলেভান বেওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। নেই বসতভিটা। দাদি শাশুড়ি রাহেলা বেওয়ার জায়গায় টিনশেড ঘর তুলে বসবাস করছি। স্বামী অনেকদিন আগে মারা গেছেন। আমার একটাই ছেলে নাজমুল। বিয়ে না করে গার্মেন্টসের চাকরি নিয়ে আমাকে দেখাশুনা করছিল। হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে গিয়ে বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, নাজমুল শহীদ হওয়ার পর প্রথমে বিএনপি’র নেতারা ২৫ হাজার এরপর জামায়াত নেতারা ২ লাখ টাকা দেয়। এনসিপি’র নেতারা একটা বাটন মোবাইল ফোন দেয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। এরইমধ্যে সরকারিভাবে আরও ৭ লাখ টাকাও পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, এসব টাকার মধ্যে থেকে সেই সময়ে গুলিবিদ্ধ ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টায় ঋণ হওয়া ১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে জমি বন্ধক নেয়া হয়। শুনেছিলাম সরকার নাকি শহীদদের জন্য মাসিক ভাতা দিবে। তা কখন থেকে পাবো জানি না। সেইসঙ্গে আমার একটি বিধবা ভাতাও দাবি করছি। এ ছাড়া কেউ ৫ শতক জমি কিনে বাড়ি করতাম। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ নাজমুলের পরিবারের খোঁজখবর নেয়া হয়। গত দুই ঈদে আমি নিজে গিয়ে তাদের কাছে ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছি। গোলেভান বেওয়াকে বিধবা ভাতার আওতায় আনা হবে।