বিসিবি সভাপতির কাঠগড়ায় স্থানীয় কোচরা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: তাওহিদ হৃদয় নিজে যেমন আক্রান্ত হয়েছেন, তেমনি অন্যকেও করেছেন। উদাহরণ শ্রীলঙ্কা দলেই আছেন। বিশেষ করে লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা বাংলাদেশের ব্যাটারের শক্তির জায়গায় বল ফেলে বেদম মার খেয়েছেন গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ডালাসে লঙ্কান এই লেগিকে টানা তিন ছক্কা মেরে ম্যাচভাগ্য গড়ে দেওয়া হৃদয়ের আবার নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন একই দলের অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা।
ডাম্বুলায় চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে এই পেসার তাওহিদের দুর্বলতার জায়গা প্রকাশ্য করে দিয়ে টানা একই লাইনে বোলিং করে গেছেন। অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে চতুর্থ বা পঞ্চম স্টাম্প লাইনের বল খেলতে গিয়ে হাঁসফাঁস করেছেন ব্যাটার। কয়েকবার বল ব্যাটের কানা নিতে নিতেও নেয়নি। শেষে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েই বিদায় নেওয়া তাওহিদের এই লাইনের বলে শটের সীমাবদ্ধতা আবার নতুন করে তুলে দিয়েছে পুরনো প্রশ্নও।
জাতীয় দলে আসার আগেই কেন শটের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয় না বাংলাদেশের ব্যাটারদের?
তাওহিদ একা নন, বর্তমান জাতীয় দলের আরো অনেকের শটের সীমাবদ্ধতাও নানা সময়ে দৃশ্যমান। দায়িত্ব নেওয়ার পর তৃণমূলের ক্রিকেট নিয়ে নানা উদ্যোগে ব্যস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলামেরও যা নজর এড়ায়নি। দেখেশুনে তাঁরও প্রশ্ন, ‘এসব নিয়ে কাজ তো জাতীয় দলে আসার আগেই হয়ে যাওয়ার কথা।’ অথচ ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৭৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলার পরও তাওহিদের শটের সীমাবদ্ধতা দৃশ্যমান, যা নিয়ে আমিনুল বলছিলেন, ‘নির্দিষ্ট বলে বিকল্প শটের মজুদ নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে আসে বেশির ভাগ ক্রিকেটার।
আমাদের ক্ষেত্রেও তা-ই হওয়া উচিত।’
তা না হওয়ার জন্য আমিনুল অবশ্য বিদেশি কোচদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন না। তাঁর কাঠগড়ায় বরং স্থানীয় কোচরাই, ‘একটি ছেলে নানা ধাপ পেরিয়ে জাতীয় দলে আসার পথে স্থানীয় কোচদের সংস্পর্শেই থাকে বেশি। শক্তির জায়গা চিহ্নিত করার পাশাপাশি ওদের ঘাটতি বা দুর্বলতা নিয়ে কাজ ওই পর্যায়েই হয়ে যাওয়া দরকার। হৃদয়কে দেখলাম অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ক্রমাগত স্কয়ার কাট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সে তো লেট কাট, কাভার ড্রাইভ করার চেষ্টাও করতে পারত। ওই একই ডেলিভারিতে অনেক রকম শট খেলার দক্ষতা বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ব্যাটারেরই থাকে।’ অথচ এসব দুর্বলতা নিয়ে বাংলাদেশে জাতীয় দলেও খেলে ফেলা যায়! ঠাসা সূচির কারণে বিদেশি কোচরাও তাঁদের নিয়ে কাজ করার ফুরসত তেমন পান না। এ জন্যই আগামী মাসে ভারতের ফাঁকা করে দেওয়া ‘উইন্ডো’তে ক্রিকেটারদের স্কিল নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন হেড কোচ ফিল সিমন্স। ওই সময়ে তাই নতুন কোনো সিরিজও চাননি তিনি।
কিন্তু তাওহিদকে ছোট থেকে পাওয়া স্থানীয় কোচরা তাহলে কী করেছেন? আজ তাঁদের সবাইকে ডেকে পাঠানো আমিনুল করবেন এই প্রশ্নটিই, ‘স্থানীয় কোচদের সোমবার ডেকেছি। তাঁদের কাছে জানতে চাইব, ব্যাটাররা শটের সীমানা বাড়িয়ে কেন জাতীয় দলে আসছে না? এখন থেকে এই বিষয়গুলো দেখা হবে। আমি হাই পারফরম্যান্স গভর্ন্যান্স চালু করতে যাচ্ছি।’ সোজা বাংলায় বললে স্থানীয় কোচদের কাজে বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি। এত দিন প্রশ্নহীন থাকার পর এবার তাঁরা আমিনুলের কাঠগড়ায়!