মৌলিক গানই একজন শিল্পীর প্রথম অর্জন,সাজিয়া সুলতানা পুতুল

প্রথম নিউজ, অনলাইন: গানের ক্যারিয়ারে দুই দশক পার করেছেন। গাওয়ার পাশাপাশি এখন সুর ও সংগীত করেন সাজিয়া সুলতানা পুতুল। সেই সঙ্গে করেন লেখালেখি ও উপস্থাপনা। গান, ক্যারিয়ার ও বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন।
শুনেছেন সুদীপ কুমার দীপ।
১৩ জুলাই আপনার জন্মদিন ছিল। কেমন কেটেছে দিনটি?
খুবই ভালো। এখনকার জন্মদিন তো পরিবারকে কেন্দ্র করে হয়।
পরিবারের বাইরে কোনো বড় আয়োজন করা হয় না। এবারের জন্মদিনে আমার বাবার বাড়ির সদস্যরা শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন। সবাই দুপুরে হৈ-হুল্লোড় করে কাটিয়েছি। রাতে আমার জীবনসঙ্গী রেজা (সৈয়দ রেজা আলী) সবাইকে ডিনার করিয়েছে।
এটা সে প্রতিবছরই করে। এক কথায় দিনটি আনন্দে পরিপূর্ণ ছিল।
জন্মদিন উপলক্ষে দুটি গান প্রকাশ করেছেন—‘জারুল বোনের মেয়ে’ ও ‘পুতুল জন্ম’। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
দুটি গান দুই ধরনের। আমি যে গানটার সুর ও সংগীত করেছি সেটার নাম ‘পুতুল জন্ম’।
এটি প্রোডিউস করেছে রেজা। ভিডিওচিত্রও নির্মাণ করেছে সে। যারা আমার কম্পোজিশন শুনে অভ্যস্ত তারা জানেন গানগুলোতে হারমোনিয়ামের ব্যবহার থাকেই। এবার সরাসরি হারমোনিয়ামকে প্রধান ইনস্ট্রুুমেন্ট করেই গানটি কম্পোজিশন করেছি। শ্রোতারা গানটি দারুণ পছন্দ করেছে। অন্যদিকে ‘জারুল বোনের মেয়ে’ গানটি দ্বৈত গেয়েছি লুৎফর হাসানের সঙ্গে। আমাদের জুটির অনেক গান শ্রোতাপ্রিয়। একটা সময় নিয়মিত গান প্রকাশ করতাম আমরা। মাঝখানে আট বছর বিরতি পড়ে গেল। একটা তথ্য দিয়ে রাখি, এই গানটির কথা আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম। আট বছর আগে লুৎফর হাসান ফেসবুকে গানটির কথা পোস্ট করে লিখেছিলেন আমার আর তার কণ্ঠে দ্রুত গানটি প্রকাশিত হবে। সেটা হতে হতে আট বছর হয়ে গেল! তাও ফেসবুক মেমোরি না মেনশন করলে মনে হয় ভুলে যেতাম আমরা। গানটার কথা-সুরও কিন্তু লুৎফর হাসানের। সংগীত করেছে রেজা। এই গানটিও বেশ সাড়া পাচ্ছে।
[[
নিয়মিত অডিওতে গান করছেন। কিন্তু প্লেব্যাকে আপনি নেই কেন?
প্লেব্যাক তো আমার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। এখানে সংগীত পরিচালক, চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার এমনকি অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও হাত থাকে। তাঁদের পছন্দেই নেওয়া হয় কণ্ঠশিল্পীদের। আমাদের চলচ্চিত্রে ছোট ছোট টিম আছে। এই টিমগুলো কখনো নিজেদের বাইরে গান করেন না। আমি কখনোই কোনো টিমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। সিন্ডিকেটও পছন্দ করি না। ফলে গত ২০ বছরের ক্যারিয়ারে চলচ্চিত্রে মাত্র তিন-চারটি গান করেছি। অবশ্য এটা নিয়ে আমার অভিযোগ নেই। দুই শতাধিক মৌলিক গান আছে আমার। এটাই বা কম কিসে! ফিল্ম হোক আর অডিও—মৌলিক গানই একজন শিল্পীর প্রথম অর্জন।
লেখালেখি কেমন চলছে? নতুন কী লিখছেন?
লেখালেখিটা আমার অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এর আগে পাঠক আমার কাছ থেকে কবিতা ও উপন্যাস পেয়েছেন। এবারের বইমেলায় গল্পের বই নিয়ে হাজির হব। ১০টি ছোট গল্পের সংকলন নিয়ে বইটি।
একমাত্র সন্তান গীতলীনার বয়স তিন বছর। বড় হয়ে সেও কি মায়ের মতো গান ও লেখালেখি করবে?
সাহিত্যচর্চা করবে কি না সেটা জানতে আরেকটু সময় লাগবে। তবে গানে গীতলীনা এখনই সিদ্ধহস্ত। আমার সঙ্গে প্র্যাকটিস করে। ওর আবার ছড়াগান পছন্দ নয়। কঠিন কঠিন গানগুলোই বেশি পছন্দ করে। ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটা ওর খুব প্রিয়। আমার মা-বাবা বলতেন, আমি নাকি তিন বছর বয়সেই গান শুরু করেছি। বিশ্বাস করতাম না, হেসে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু গীতলীনাকে দেখার পর বিশ্বাস হয়েছে। খুব দ্রুত ওর সঙ্গে একটা কোলাবরেশন করতে চাই, এটা এখন আমার প্রথম ইচ্ছা।
‘পুতুল ঘরে আত্মকথন’ অনুষ্ঠানটি কেমন চলছে?
শিগগির শতপর্ব প্রচারিত হবে। বুঝতেই পারছেন, উপভোগ না করলে এতদূর আসতে পারতাম না। আগে টেলিভিশন চ্যানেলে গানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম। সেখানে অনেক সীমানা ছিল। স্ক্রিপ্টের বাইরে, গানের বাইরে প্রশ্ন করাই যেত না। কিন্তু ‘পুতুল ঘরে আত্মকথন’ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত হয়। আমি নিজের ইচ্ছামতো প্রশ্ন করতে পারি। আমন্ত্রিত অতিথিদের ক্যারিয়ারের বাইরে জীবনবোধ, সমাজের প্রতি দায়িত্ব, মনুষ্যত্বসহ অনেক বিষয়ে আলোচনা করতে পারি।