বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাশ করলেন দম্পতি

প্রথম নিউজ, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): ‘বয়স কেবল একটি সংখ্যা’—এই বাক্যটির জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের মুহাম্মদ কাইসার হামিদ (৫১) ও মোছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার (৪৪) দম্পতি। দুজনেই চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সমান জিপিএ তথা ৪ দশমিক ১১ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করে তাক লাগিয় দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পেয়ে যেন আনন্দের বন্যা বইছে এই দম্পতির মাঝে। বাবা-মায়ের এমন সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভাসছে ছেলে-মেয়েরাও। বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করায় এ দম্পতিকে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ সরাসরি শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ মিষ্টিমুখ করাতেও দেখা গেছে।
দম্পতির শিক্ষা জীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে।ওই মাদ্রাসা থেকে তারা দুজন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এর অধীনে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ কেন্দ্রে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ সফলতা অর্জন করেছেন।
পড়া-লেখার মাঝপথে থেমে যাওয়া এ দম্পতির জীবনে এসএসসি পরীক্ষা যেন দ্বিতীয় সূচনা।তাদের এই যাত্রা শুধু তাদের নিজেদের জন্যই নয়, বরং সমাজের অনেক মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে ‘শিখতে কোনো বয়স লাগেনা।’ এই দম্পতি এখন কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচিত মুখ।
কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামে। মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার জেলার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে।তারা দুজনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন আজ থেকে ৩১ বছর আগে। পারিবারের অন্যান্য সদস্যরা উচ্চ শিক্ষিত হলেও তারা দুজন মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ না করায় তাদের মনে দুঃখ ছিল। অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির জোরে এবার তারা সেই দুঃখ ঘুচিয়েছেন।
মুহাম্মদ কাইসার হামিদ সাহিত্যচর্চা এবং সাংস্কৃতিাঙ্গনেরও একজন সক্রিয় কর্মী। কবিতা লেখেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে তার শতাধিক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিকতার কাজেও তিনি জড়িত আছেন। মুহাম্মদ কাইসার হামিদ যুগান্তরকে বলেন, সমাজ থেকে অনেক ভালো কিছু পেয়েছেন। কেবল কষ্ট ছিল পড়া-শোনা নিয়ে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একই কষ্ট।
পরীক্ষায় পাশ করতে পেরে আনন্দিত রোকেয়া আক্তারের ভাষ্য, ‘অল্প বয়সে বিয়ে হয়। এ কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এই কষ্ট প্রায় তিন যুগ ধরে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। আমরা দুজনই কষ্ট দূর করার উপায় খুঁজতাম। এদিকে লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, মুহাম্মদ কাইসার হামিদ ও মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার দম্পতি এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। প্রায় শেষ বয়সে এসে সংসার সামলিয়েও তারা দুজনে যে নজির গড়েছেন, এটা দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাদের সাফল্যে আমরা খুবই খুশি।