বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে এতো চিন্তার কিছু নেই- প্রধানমন্ত্রী
শত বাধা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবো।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসবে। কারণ আমাদের শত্রু বাইরে থেকে আসতে হয় না, দেশের ভেতরেও আছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বা ’৭৫ এর খুনি বা তাদের সন্তান-সন্তুতিরা যারা রয়েছে এরা কখনো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না বা বাধা দেবে। শত বাধা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবো। কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে এত চিন্তার কারণ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাগণের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫টি প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন এবং ‘গভর্নমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস’ সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারী ১৯টি ক্যাডার সার্ভিসের ৬০২ জনের মধ্যে ৩০ জন কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে ‘মেধা সনদ’ তুলে দেন এবং তিনজনের মাঝে ‘মর্যাদা পদক’ বিতরণ করেন। ৬ মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে তাহসিন বিনতে আনিস শীর্ষস্থান অর্জন করে রেক্টর’স পদক লাভ করেন। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও বক্তৃতা করেন।
এ ছাড়া ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে চারজন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’র (বিপিএটিসি) রেক্টর মো. আশরাফ উদ্দিন ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন এবং শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর দুটি পৃথক ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (গভর্নমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস), ৫শ’ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, নবনির্মিত টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ, নবনির্মিত কুমিল্লা সার্কিট হাউজ এবং বিপিএটিসি’র ১৫তলা আধুনিক ডরমেটরি ভবন। অনুষ্ঠানে নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের ‘৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল সৈনিক’ আখ্যায়িত করে দেশের অব্যাহত ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনাদের সজাগ থাকতে হবে যাতে দেশের প্রতিটি উন্নয়ন অব্যাহত ও টেকসই হয়, যার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমার চাওয়া একটাই, একটাই স্বপ্ন, যেটা আমার বাবা এদেশের মানুষকে নিয়ে দেখেছিলেন। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আর তাদের জীবনমান উন্নত করা। আজ পর্যন্ত যতটুকু করতে পেরেছি ভবিষ্যতের জন্য যেন সেটা স্থায়ী হয়, চলমান থাকে, সেটাই আমার একমাত্র দাবি সবার কাছে।
তিনি বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করে আজকে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি তার থেকে বাংলাদেশ যেন কিছুতেই পিছিয়ে না যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, কিছু সমস্যায় আমরা আছি। রিজার্ভ নিয়ে অনেকে কথা বলে- আমি বলছি রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই। আমার গোলায় যতক্ষণ খাবার আছে ততক্ষণ আমরা চিন্তা করি না। দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ফসল ফলাবো নিজের খাবার নিজেরা খাব, কেনাকাটা বা খরচ না হয় আমরা একটু কমই করবো। কিন্তু আমার নিজের দেশের মর্যাদা নিয়ে আমাদের চলতে হবে। তিনি বলেন, ৪১ এর বাংলাদেশের মূল কারিগর এবং সৈনিক হবেন আজকের কর্মকর্তারা। তখন তো আর আমরা থাকবো না। কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে যায়। আমি শুধু সেটাই চাই। প্রধানমন্ত্রী সিভিল সার্ভিসের নবীন কর্মকর্তাদের দেশের প্রতি দায়িত্ব বোধ নিয়ে কাজ করার এবং এখানে লব্ধ প্রশিক্ষণকে দেশ ও জনগণের কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকতে হবে। কারণ তাদের রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝরানো যে উপার্জন সেই উপার্জনের টাকা দিয়েই আমাদের সবার সবকিছু চলে। এ কথাটা আমাদের ভুললে চলবে না। শেখ হাসিনা বলেন, চাকরিটা শুধু চাকরি নয়, এটা দেশের সেবা করা। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে নজরদারির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করবে তাদের মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজও করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে যে, এই সব খেটে খাওয়া মানুষদের কষ্টের ফসলটাই আমরা ভোগ করি। কাজেই তাদেরকে কীভাবে আমরা সহযোগিতা করতে পারি সেটাই আমাদের দেখতে হবে। সরকারের বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান এবং উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেধা যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য মেধাবীদের আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাব। কারণ এই মেধাগুলোই আমার দেশের উন্নয়নের কাজে লাগবে। ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির এই যুগে বিশ্বে বাজার খুঁজে বের করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।