খালেদা জিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছেন শেখ হাসিনা: রিজভী

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছেন শেখ হাসিনা: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের গডফাদারের সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কোন পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন বিএনপি আন্দোলন করলে তাদের হাত পুড়িয়ে দেয়া হবে।ওবায়দুল কাদের আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করেছেন আপনার শিক্ষার আলো আছে বলে মনে করতাম এখন তো দেখছি নারায়ণগঞ্জের গডফাদারের সাথে আপনার তো কোন পার্থক্য নেই। আপনাকে কি গোটা জাতির অভিভাবক বানানো হয়েছে নাকি? এ সমস্ত কথাবার্তা তো গডফাদাররা বলে।’

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের ফ্যাসিষ্ট প্রধানমন্ত্রীর লন্ডনের বক্তব্য সারা দুনিয়ায় জঘন্যতম দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমার সমতুল্য। একজন রাজনীতিবিদের এহেন বক্তব্য সারা পৃথিবীতে নজীর নেই। কোন প্রকাশ্য সভায় একজন ব্যক্তির এহেন বক্তব্য অশ্রাব্য, কুশ্রী হতে পারে তা কখনো বিশ্বাস করার মতো নয়। কিন্তু শেখ হাসিনা লন্ডনে সকল রীতিনীতি, শিষ্টাচার ও সভ্যতাকে তোয়াক্কা না করে নিকৃষ্টতম ইতর ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার বয়স ৭৮ বছর, আর শেখ হাসিনার বয়স ১ বছর কম অর্থাৎ ৭৭। কিন্তু দেশনেত্রীর বয়স ৮০ বছর বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বয়স যদি ৭৭ হয়, তাহলে ৮০ বছর থেকে কয়বছর কম হয়? অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি নিজেকে কিশোরী মনে করেন? শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার ৮০ বছর বয়স হয়ে গেছে, তাই আর বেঁচে থাকার দরকার কি। শেখ হাসিনার বহুরৈখিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আবর্তিত হয় বেগম খালেদা জিয়ার প্রাণনাশের প্রচেষ্টা। শেখ হাসিনার লন্ডনের বক্তব্যে সরাসরি তিনি স্বীকার করে নিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছেন। গণতন্ত্রকামী মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরী করার লক্ষ্য নিয়েই বক্তব্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন, “আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো ৮০’র উপরে। সময় হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এতো কান্নাকাটি করে লাভ নাই।” আল্লাহ ছাড়া কি কেউ জানে কে কখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে? শেখ হাসিনা কিভাবে জানলেন “সময় হয়ে গেছে”? তার মানে তিনি দেশনেত্রীকে হত্যা করার প্রস্তুতি নিয়ে ১৮ দিন আমেরিকা—বৃটেনে ভ্রমণ করে দেশে ফিরেছেন। কারণ উনি তো জানেন কাকে কখন দুনিয়া থেকে সরাতে হয়, এর জন্যই তো উনি এত গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেন। বেগম খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা যে হত্যা করবেন তা আগেভাগে ঘোষণা দিলেন। যে কারণে মিথ্যা আইনী ব্যাখ্যা দিয়ে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন না। ভয়াবহ কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁর কিছু হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারকে পৃথিবীর কোন শক্তি রক্ষা করতে পারবে না। দেশের জনগণ গণভবনের প্রতিটা ইট খুলে প্রলয় সৃষ্টি করবে। তাঁর এই বক্তব্য উস্কানিদানকারী রাজনীতির ময়দানকে অনিষ্টকর ও বিপজ্জনক পরিণামের দিকেই ঠেলে দিবে।’

রিজভী বলেন, দেশে গাঢ় অন্ধকার সময় চলছে। এত খারাপ সময়ে বাংলাদেশ আগে কখনও নিপতিত হয়নি। গত ১৫ বছর জনগনের মাথার ওপর বসে আছে চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ, নিষ্ঠুর, বিকারগ্রস্ত, ধিকৃত কথন ও বিকৃত রুচির এক স্বৈরশাসক। আপনারা জানেন, ২৪ বছর আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কাকে রং হেডেড ঘোষনা করেছিল? বিনা ভোটে ক্ষমতায় থেকে লুটপাট, প্রতিশোধ, আক্রোশ মেটাবার জন্য গোটা দেশকে তিনি জিম্মি করে এক দুঃসহ বর্বর দুঃশাসন চালাচ্ছেন। নিষ্ঠুর দাম্ভিক স্বার্থপরতা এবং জোরেসোরে মিথ্যা বলার এক জলন্ত প্রতীক শেখ হাসিনা। দেশের আইন—আদালত, শাসন—প্রশাসন, বিচার—আচার, টাকা—পয়সা, ব্যবসা বানিজ্য সবকিছু তার করতলে। গণবিচ্ছিন্ন গণধিকৃত মাফিয়া শেখ হাসিনা আবারো ভোট ছাড়া ক্ষমতার নেশায় অন্ধ হয়ে দেশে দেশে ধর্না দিয়ে ব্যর্থ হয়ে পুরোপুরি উন্মাদের মতো আচরণ করছেন।

তিনি বলেন, সামনে নিশ্চিত পতনের করুণ পরিণতির আতংকে শেখ হাসিনার সাথে তার লুটেরা এবং গেস্টাপো বাহিনী চোখে শর্ষে ফুল দেখছে। তাদের সভ্য বচন উবে গেছে। এখন বিকারগ্রস্তের মতো প্রলাপ বকছে। দেশের জনগণ তাদের হিংস্র, উদ্ভট, বেসামাল, নির্জলা মিথ্যা কথাবার্তা শুনতে শুনতে ত্যক্তবিরক্ত। শেখ হাসিনা এবং তার দল চরম অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত হয়েছে। এমন দেউলিয়া হয়ে গেছে যে, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “দিল্লি আছে আমরাও আছি। দুই সেলফিতেই বাজিমাত, তলে তলে আপস হয়ে গেছে। এক সেলফি দিল্লিতে আর এক সেলফি নিউইয়র্কে।” তার মানে তো পরিস্কার—ভোটের আর দরকার নাই। বাংলাদেশের মানুষের আর দরকার নাই। অন্যের কাঁধে চড়ে বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকতে চান। এই কাপালিক স্বৈরাচারী নিশিরাতের ভোটের সরকার জনগণের শত্রু। সবকিছু জেনে শুনে কেউ এই জালিম বাংলাদেশে নিপীড়ক ফ্যাসিবাদকে গোপনে সহযোগিতা করবেন না। এরা গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। 

আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর উদ্দেশে রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার মনে রাখা দরকার তলে তলে গোপনে আপস হয় না, হয় ষড়যন্ত্র। পরনির্ভরশীল, কাপুরুষ ও ভীরুরাই তলে তলে আপোষ করে। চোরেরাই আপোষের রাস্তা খুঁজে। এই সস্তা কথায় দলের নেতাকর্মী আর দুঃশাসনের শিখন্ডি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের দলবাজদের অভয় দিতে চান কাদের সাহেব। তবে লাভ নাই। এরা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে হারবে বলেই তলে তলে আপোষের কথা বলছেন। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে একাধিকবার বলেছিলেন—আপোষ করলে আমরা ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। এখন তলে তলে কি দিয়ে আপোষ করলেন তা জনগণ জানতে চায়। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার কোন পথ আর নেই। চাপাবাজি দিয়ে, গুন্ডামী করে জনগণ দুরে থাক নিজের দলের নেতাকর্মীদেরও আর জাগিয়ে তুলতে পারবেন না। গুন্ডামী হচ্ছে আওয়ামী রাজনীতির সংস্কৃতি। এমনকি নিজ দলের অনেক নেতাদের বিরুদ্ধেও লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল সন্ত্রাসীদের। ড. কামাল হোসেনের জনসভায় বিস্ফোরণ, কাদের সিদ্দিকীর সম্মেলনে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ, তোফায়েল আহমেদের বিরদ্ধে মহিলা যুবলীগকে লেলিয়ে দেয়া, এমনকি ১৯৯৬ পরবর্তী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া বঙ্গভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের কাছে প্রাণভয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অপরাধীরা তাদের অপরাধ গোপন রাখতে পারে না। পৃথিবীর কেউ না জানলেও তারা নিজেরাই জীবদ্দশায় প্রকাশ করে যান তাদের ঘৃনিত অপরাধের কথা। খুনিরাও তাদের খুনের কথা স্বীকার করে যান। শেখ হাসিনা ১৩ বছর পরে স্বীকারোক্তি দিলেন যে, আইন আদালত নয়, তিনি শুধুমাত্র নিজের জিদ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করেছিলেন। আপনারা জানেন, ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর দীর্ঘ ৩৮ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ক্যান্টমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টেনে হেঁচড়ে জোর করে বের করে দেয় শেখ হাসিনা। সে সময় বেগম জিয়া তাঁর আইনজীবীদের সাথে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করলেও তাঁকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। আপিলের শুনানির সুযোগও দেয়া হয়নি। তার মানে দেশে আইন আদালতের কোন মূল্য নেই। আদালতের বিচার—আচার সব চলে হাসিনার কথায়। আইন আদালত থাকে শেখ হাসিনার ভ্যানিটি ব্যাগে। অচিরেই জনগন হাসিনার স্বীকারোক্তিতে জানতে পারবে যে তিনি নিজেই বলবেন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকিয়েছি অমুক প্রতিজ্ঞার কারণে। তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছি তাঁর জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে। শেখ হাসিনার কথায় স্পস্ট যে, দেশের প্রতিটি গুম খুন লুটপাট অন্যায় অবিচার সব তার কথায় তার নির্দেশে হচ্ছে। শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তিতেই পরিস্কার হয় তিনিই পরিকল্পিতভাবে বেগম জিয়াকে যেমন ক্যান্টনমেন্টের নিজ বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করেছেন, একইভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম- মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামীম, সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।