প্রতিবাদের ভাষা আরও জোড়ালো হোক
যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী পরিবহন মাফিয়া শাহজাহান খান, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া কে ১১ বছর আগে আরটিভির এক টক শো তে চোখ তুলে নেয়ার ভয়ংকর হুমকি দিয়েছিলো।শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি চেয়ার থেকে উঠে তেরে যান রফিকুল ইসলাম মিয়ার দিকে। সেই ফুটেজ এখনো হয়তো আছে। আওয়ামী লীগ হলে সেই ঘটনায় এখন মামলা ঢুকে দিতো। বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতাকে এভাবে লাইভ অপমান, অপদস্ত করেন এই মাফিয়া শাহজাহান।বিএনপি হয়তো ভুলেই গেছে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি।
মনে আছে গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে এই মাফিয়া শাহজাহান বিএনপি কোনো সমাবেশ ডাকলে লঞ্চ-গাড়ি সব চলাচল বন্ধ করে দিতো, আবার হরতাল ডাকলে সব পরিবহনকে চলাচলে বাধ্য করতো। সেই শাহজাহান এখন সব বাদ দিয়ে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া কে নিয়ে বিষোদগার করছে।এতোটাই স্পর্ধা!বুঝলেনতো বিএনপি যতোই নমনীয়তা দেখাক আওয়ামী লীগ কিন্তু এখনো তাদের প্রধান শত্রু মনে করে বিএনপিকেই। হাসিনা যেই ভাষায় বিএনপিকে কথায় কথায় অভিযুক্ত করে প্রতিটি বক্তব্য দিতো।এখনো বিএনপির প্রতি তাদের সকলের মনোভাব অপরিবর্তিত।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি, এক সময়ের আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি করা চরমপন্থীদের গডফাদার, পরবর্তীতে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতা এই শাহজাহান খান গত ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ বুধবার এজলাস থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে, তিন হাজার সেনা সদস্যকে হত্যা, বন্দী করেছে, এরশাদও হত্যা করেছে, বেগম খালেদা জিয়াও দুই বার ক্ষমতায় গিয়ে হত্যা, নির্যাতন করেছে। সুতরাং তার বয়ান অনুযায়ী এনারা গিল্টি। আগে তাদের বিচার তারপর শেখ হাসিনার বিচার।
অবাক করা বিষয় হলো সফল রাস্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া কে নিয়ে এতো বড় মিথ্যাচার ও ঔদ্ধত্যপূর্ন বক্তব্য দিলো গোটা বিএনপির কোনো অংগ সংগঠন একটা বিক্ষোভ মিছিল করলো না। না আদালত পাড়ায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, না ছাত্রদল না যুবদল কেউ না।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাহেব একটা সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানালেন তাও বাচ্চারা স্কুলে যেভাবে রিডিং পড়ে সেভাবে রিডিং পড়লেন একটা লিখিত বক্তব্য। জিয়াউর রহমান কে খুনী বলছে, মাদার অব ডেমোক্রসি বেগম খালেদা জিয়াকেও নির্যাতক বলছে আর বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার সেটার প্রতিবাদ করতে হয় লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে। অথচ শেখ মুজিবের ছবি সরানো নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে তার লিখে পড়তে হয়নি। ভেতর থেকেই দুঃখ পাওয়ার প্রতিক্রিয়া চলে এসেছিলো। যদিও পরে তিনি তার বক্তব্য থেকে হয়তো কোনো কারণে সরে এসেছিলেন।
যাই হোক এরকম লিখিত বক্তব্য বিএনপি পড়তো ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে যখন রাস্তায় নামতেই দিতোনা আওয়ামী লীগ। এখন তো সেই সময় নেই। তাহলে কেন নয়া পল্টন থেকে বিএনপি বা যেকোনো অংগ সংগঠন খুনী শাহজাহান খানের এহেন মিথ্যাচার এর প্রতিবাদে একটা বিক্ষোভ মিছিল করলোনা। এখন তো আর বের হলে পুলিশ পেটাতো না। বিএনপি কেন মনে করলো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিভাবক বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে করা কটুক্তির জবাবে, এরকম একটা রিডিং পড়া সংবাদ সম্মেলনই যথেষ্ট।
শতো শতো বিএনপি নেতা-কর্মীদের গুম, খুনের সাথে জড়িত এই শাহজাহান গংরা। জুলাই আন্দোলনে দুই হাজার শিশু, কিশোর, তরুণ ছাত্র-জনতার হত্যাকারী এই পতিত খুনী হাসিনা সরকার। ৩০ হাজারের বেশি ছেলেকে অন্ধ, পঙ্গু করে দিয়েছে এই শাহজাহান গংদের সরকার।রক্তের দাগ এখনো শুকোয়নি।এতো এতো গুম, খুনের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে হুংকার দেয়া শাহজাহান খানদের বিরুদ্ধে মাঠে প্রতিবাদ জারি না রাখলে দিন দিন এরকম হুংকার দেয়া ইনু, শাহজাহানদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। আর জনমতও বিএনপির প্রতি বিরুপ মনোভাব পোষণ করা শুরু করবে। কেননা এমনিতেই বিএনপিকে জনমনে বিতর্কিত করতে নানামুখী আয়োজন সোস্যাল মিডিয়াসহ মূল ধারার মিডিয়াতে কিন্তু বিরাজমান।
লেখক: মাহবুব জামান, ফ্রিলান্সার
[email protected]