বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিইউজে ও বিএফইউজে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ওপর চালানো নির্যাতনের চিত্র নিয়ে বিএফইউজে ও ডিইউজে আয়োজিত আলোচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা সংস্কারকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কেউ যদি বলে বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তাহলে সেটা ভুল ব্যাখ্যা।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না। যারা এই বাস্তবতা অস্বীকার করছেন, তারা গণতন্ত্রের দিকেই চোখ বন্ধ করে আছেন। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা আশাবাদী সামনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে, যেখানে দেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
সীমান্তে হত্যা ও পুশইনের বিষয়ে তিনি বলেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা হচ্ছে। পুশইন চলছে। এটা কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারকে এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দরকষাকষি করতে হবে। তিনি ন্যায্য পানির প্রাপ্তি নিয়েও ভারতের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনার দাবি জানান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপ পোশাকশিল্পকে মুখ থুবড়ে ফেলতে পারে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় সংকট তৈরি করবে। সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়ে গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিভক্তি নয়, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে জাতিগত ঐক্য গড়ে তোলা। যেখান থেকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তিনটি শক্তি দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনৈতিক দল, জনগণ ও গণমাধ্যম- এই তিনটির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। রাষ্ট্র বিনির্মাণে সব মৌলিক শক্তিকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিবেধ, বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। কমন ইস্যুতে আমাদেরকে এক থাকতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক হোক, মিডিয়াতে বিতর্ক হোক, কলামিস্টরা বিতর্ক করুক সমস্যা নেই। কিন্তু দলে দলে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বিভেদ, আক্রোশ যেন না হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, স্বৈরাচার চলে গেলেও তার মানসিকতা এখনো সমাজে রয়ে গেছে। তরুণ নেতৃত্বের কেউ কেউ বলছেন- ‘অমুক না হলে তমুক হবে না’। এই মনোভাব আর স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এক ও অভিন্ন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে-এই ভাষা গণতান্ত্রিক সমাজের নয়।
তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এই বিজয় ধরে রাখতে প্রয়োজন ধৈর্য ও সহনশীলতা। জনগণ সব দেখছে—তাদের বোকা ভাবা ঠিক হবে না। অতীতে যারা এই ধরনের দম্ভোক্তি করেছেন, তারা আজ ইতিহাসে নেই। বাংলার মানুষ এসব কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার তার বক্তব্যের শুরুতেই জুলাই বিপ্লবে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি যারা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে নানা পর্যায়ে নির্যাতিত হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, মামলার ভারে ভারাক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তার লেখা কবিতা ‘জুলাই বাংলাদেশ’ পাঠ করেন তিনি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই সিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান,বিএফইউজের সহ-সভাপতি এ কে এম মহসিন, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম,প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান প্রমুখ।