প্রথম নিউজ, ঢাকা: নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ কোম্পানির কাছ থেকে কম্পিউটার কেনার চুক্তি চারদলীয় জোট সরকার বাতিল করা নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জবাব দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ কোম্পানির সঙ্গে কম্পিউটার আমদানির চুক্তি বাতিল সম্পর্কে শেখ হাসিনা আবারও মিথ্যা গালগপ্প ফেঁদেছেন। আমাদের প্রশ্ন হলো, শেখ রেহেনার কন্যা টিউলিপের নামের সঙ্গে কোম্পানির নামের মিল থাকার কারণেই বেগম খালেদা জিয়া চুক্তি বাতিল করেছিলেন-প্রধানমন্ত্রীর এই গালগপ্পের সূত্র কী? তাকে কে বলেছে শুধুমাত্র টিউলিপের সঙ্গে নামের মিলের কারণে খালেদা জিয়া ওই চুক্তি বাতিল করেছিলেন? খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে সরকার জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে চায় মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা কুৎসা রটনা করে নিজেদের অবৈধ সত্তা এবং মহাসমারোহে দুর্নীতি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিকে আড়াল করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই মিথ্যা ও কল্পিত কাহিনী বারবার প্রচার করে সেটিকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। আসলে টিউলিপ কোম্পানির সঙ্গে করা চুক্তিটি ছিল দুর্নীতি ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির একটি খারাপ নজির।
তিন কারণে বিএনপি টিউলিপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে দাবি করে রিজভী বলেন, বিএনপি সরকার এই চুক্তি বাতিল করেছিল তিনটি কারণ দেখিয়ে। এক. আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের তুলনায় দ্বিগুণ মূল্যে কম্পিউটার কেনার এই চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি বাতিলের পর বিএনপি সরকার অন্যান্য দেশ থেকে টিউলিপের সঙ্গে চুক্তির প্রায় অর্ধেক দামে কম্পিউটার আমদানি করেছিল। দুই. চুক্তির শর্তাবলীর সবই ছিল কোম্পানির পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে। তিন. চুক্তির শর্তানুযায়ী নেদারল্যান্ডস অনুদানের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বাংলাদেশকে দেয়নি। ওই চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের আভ্যন্তরীণ আদালতের রায় অনুযায়ী বিএনপি সরকার এবং পরবর্তীতে জরুরি অবস্থার সরকার কেউ-ই ক্ষতিপূরণ দেয়নি। তিনি বলেন, চুক্তি বাতিলের পর সিদ্ধান্ত ছিল আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আইনি লড়াই ছেড়ে দিয়ে টিউলিপ কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেয় রাষ্ট্রীয় অর্থে। অথচ নেদারল্যান্ডস সরকারের কাছ থেকে একটি টাকাও পায়নি বাংলাদেশ, একটি কম্পিউটারও নয়।
শেখ হাসিনার সরকার টিউলিপকে অযৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ ক্ষতি করার দায় এড়াতে পারে না দাবি করে রিজভী বলেন, ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী সরকার ওই কোম্পানির লোকদের দুই মিলিয়ন ১৩০ হাজার ইউরো বা ২৩ কোটি টাকা পৌঁছে দেন কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে। জরিমানার নগদ টাকা ছাড়াও মামলা চালানোর খরচ ও অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার নেদারল্যান্ডস সফরে সরকারি তহবিল থেকে আরও খরচ হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ কোটি নগদ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদনকারী শেখ হাসিনার সরকার এর দায়দায়িত্ব এড়াতে পারবেন কী? টিউলিপের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের ইআরডি সচিব ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ওই শাসনামলের শেষের দিকের এক শুক্রবার ছুটির দিনে অত্যন্ত গোপনে মারাত্মক গলদপূর্ণ ওই চুক্তি করেছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামত উপেক্ষা করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী টিউলিপ কোম্পানির কাছ থেকে ১০,৩৮৮টি কম্পিউটার ও কিছু আনুষঙ্গিক সামগ্রী কেনার কথা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই প্রকল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে নেদারল্যান্ডস সরকারের আর বাকি ৫০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডাচ সরকার অনুদানের সে টাকা দেয়নি।’
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখার সময়ে তার প্রথম মেয়াদে করা টিউলিপ কোম্পানির সঙ্গে কম্পিউটার কেনার চুক্তি জোট সরকার কিভাবে বাতিল করেছিল তা উল্লেখ করে বিএনপির বিরুদ্ধে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ তোলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
মারুফ কামাল খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট ; সাবেক প্রেস সচিব, বিএনপি চেয়ারপারসন (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: