Ad0111

ভূত না, আমি হাজারী, মরি নাই, বেরিয়ে এসেছি

স্বাধীনতার পর ফেনীর প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য খাজা আহমদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বললেন: 'মুজিব ভাই, আর তো পারা যাচ্ছে না

ভূত না, আমি হাজারী, মরি নাই, বেরিয়ে এসেছি
প্রথম নিউজ, ঢাকা: স্বাধীনতার পর ফেনীর প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য খাজা আহমদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বললেন: 'মুজিব ভাই, আর তো পারা যাচ্ছে না। রাজনীতিই ছেড়ে দিব। মান-সম্মাান বলে আর কিছু থাকছে না ওর জন্য। আস্পর্ধা ও বেয়াদবির কোনও সীমা নাই ওর।' খাজা সাহেব শেখ সাহেবের সমবয়সী। পুরনো বন্ধুও। জিজ্ঞেস করলেন: আবার কী করেছে হারামজাদা? - কী করতে বাকি রেখেছে বলেন! একে একে কিছু ফিরিস্তি দিলেন তিনি। তাকে থামিয়ে দিয়ে শেখ সাহেব বললেন: 'বুঝেছি। আর বলতে হবে না। আমি নিজেই দেখছি ব্যাপারটা।' ফেনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা, উদীয়মান যুবনেতা, সাবেক ছাত্রনেতা জয়নাল হাজারীকে গ্রেফতার করা হলো। কয়েক মাস জেলে খেটে ছাড়া পেয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এলেন হাজারী। অদ্ভুত রংচঙয়ে পোশাক। মাথায় হ্যাট, হাতে ও গলায় লোহার মোটা চেইন প্যাঁচানো। ক্যান্টিনে ঢুকেই সামনে পেলেন প্রবীণ সাংবাদিক ও ফেনীরই আরেক সংসদ সদস্য এবিএম মূসাকে। তিনি যে চেয়ারটায় বসা সেটায় জুতা সমেত এক পা তুলে দাঁড়ালেন হাজারী। স্যালুটের ভঙিতে সালাম করে বললেন, আসসালামু আলাইকুম মূসা ভাই। চমকালেন? ভূত না, আমি হাজারী। মরি নাই। বেরিয়ে এসেছি। আরো কতদূর এগুতেন আল্লাহ্ জানে। মূসা সাহেবের কপাল ভালো। এ সময় ক্লাবে ঢুকলেন শেখ ফজলুল হক মণি। তাকে দেখে পা নামিয়ে গিয়ে তার পা ছুঁয়ে সালাম করলেন। বললেন, মণি ভাই, এখানে এসেছি কেবল আপনাকে সালাম করতে। আপনিই আমাকে বের করেছেন আমি জানি। না হলে হয়তো জেল থেকে আমার লাশ বেরুতো। আমি যতদিন বাঁচবো শুধু আপনাকেই নেতা মানব। আপনার ওপরে আমার আর কেউ নাই। আর কোনও ব্যাটারেই মানি না। 'চুপ। কথা কম। মাথা গরম করবা না। এদিকে আসো।' মৃদু ধমক দিলেন শেখ মণি। তিনি তার আওয়ামী যুবলীগেই হাজারীকে কনিষ্ঠ প্রেসিডিয়াম মেম্বার করেছেন। কার ওপর হাজারী রাগ ঝাড়ছে সেটা বুঝেই 'মাথা গরম' সেই যুবনেতাটিকে নিচুগলায় কিছু পরামর্শ দিয়ে পিঠ চাপড়ে বিদায় করলেন নেতা।
ফেনীর রাজনীতিতে এরশাদ শাসনামলে আবারও হাজারী হয়ে ওঠেন দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী। কখনো স্টিয়ারিং কমিটি, ক্লাস কমিটি আবার কখনো স্ট্যান্ডিং কমিটি নামে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে তিনি আধিপত্য বিস্তার করেন। সন্ত্রাসী কায়দায় ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্যও হয়ে যান। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে হাজারী হয়ে ওঠেন চরম দুর্বিনীত ও অপ্রতিরোধ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ ও প্রকাশ্য মদতে। ফেনী হয়ে ওঠে খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, জুলুম, চাঁদাবাজি, দখল, ছিনতাই সহ নানান সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। তখনকার ঘোষিত পলিসিই ছিল জেলায় জেলায় হাজারীর মতন গডফাদার সৃষ্টি করে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখা। সে অনুযায়ী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষীপুর, বরিশাল, পাবনা, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ সহ বিভিন্ন অঞ্চলে কুখ্যাত গডফাদার সৃষ্টি করে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল সব কর্তৃত্ব। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতা হারাবার পর সব গডফাদার রাতের আঁধারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এতে আওয়ামী নেতৃত্ব বুঝতে পারে যে, প্রশাসনিক মদত ও ক্ষমতার ছত্রছায়া ছাড়া গডফাদাররা নিজেরাই টিকতে পারে না।
তারপর তারা পলিসি পালটায়। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হয়ে দাঁড়ায় তাদের ক্ষমতার রক্ষাকবচ। হাজারীদের আগেকার সেই কদর আর তাই ফিরে আসেনি।

মারুফ কামাল খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট ; সাবেক প্রেস সচিব, বিএনপি চেয়ারপারসন

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news