জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক- ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ব্যাহতের ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি
সতর্কতার সঙ্গে কর্মসূচি নির্ধারণ না করলে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি সুযোগ পাবে

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি। দলটি আরও মনে করছে, এর অংশ হিসাবে পরিকল্পিতভাবে একটি মহল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বুধবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়া সংস্কার নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে দেশের চলমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে বুধবার গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশের উদ্দেশ্য, আওয়ামী লীগের হামলা, সংঘর্ষে হতাহত, সেনাবাহিনীর ইতিবাচক ভূমিকা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি আলোচনা হয় সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শিষ্টাচারবিবর্জিত বক্তব্য ও স্লোগান এবং অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুত আগামী ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও। বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সভায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও সমর্থকদের হামলায় ৪ জন নিহত হওয়ায় গভীর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থায়ী কমিটি। সভা মনে করে, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার জন্য ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশে আক্রমণ করে। ফলে সরকারকে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করতে হয়, যা এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার নীলনকশা বলে মনে করা হয়। সভায় এ প্রসঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করা হয়। নেতারা আশা করেন, রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তাদের কর্মসূচি নির্ধারণ করবে, অন্যথায় গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়া হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করে, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বিঘ্নিত করতে এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ব্যাহত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি প্রভৃতি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অযোগ্যতা ও নির্লিপ্ততা পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা গণমাধ্যমে শুধু কথাই বলছেন; কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সভা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য অতিদ্রুত সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানায়।
আরও বলা হয়, সভায় সম্প্রতি সংঘটিত মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জড়িয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শিষ্টাচারবিবর্জিত বক্তব্য ও স্লোগান গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর-উত্তম, বিএনপির চেয়ারপারসন ও গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের তরুণ জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত অশ্লীল বক্তব্য ও স্লোগান গোটা জাতিকে বিক্ষুব্ধ করেছে। সভায় এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভা মনে করে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু রাজনৈতিক পরিবেশকেই বিনষ্ট করবে না-গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। সভা আশা করে, সব রাজনৈতিক দল পারস্পরিক মর্যাদা ও সৌহার্দের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে এ ধরনের অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে। সেই সঙ্গে মিটফোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হত্যার নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব ছাড়াও ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।