গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান।

গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রথম নিউজ, অনলাইন: চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিতে নতুন বৈশ্বিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের গবেষণা সবসময়ই চলবে। কিন্তু একটা দুঃখের কথা না বলে পারি না, সেটা হলো আমাদের কৃষি গবেষণা চলছে, বিজ্ঞানের চলছে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা খুবই সীমিত। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিন। গতকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘এনএসটি ফেলোশিপ’ ও ‘বিশেষ গবেষণা অনুদান’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১০ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, ২১ জনকে এনএসটি ফেলোশিপ ও ১৬ জনকে বিশেষ গবেষণা অনুদানের চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ডাক্তারদের একটি মহল এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চিকিৎসা চর্চা ও গবেষণা বাদ দিয়ে সরকারি চাকরি অথবা রাজনীতিতে চলে যান।

আর এক শ্রেণি আছেন তারা শুধু টাকা কামাতেই ব্যস্ত। একই সঙ্গে সরকারি চাকরি এবং প্রাইভেটে প্র্যাকটিসও করেন। সরকারি চাকরি আর প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পর সেখানে কিন্তু আর গবেষণা হয় না। আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা খুব দরকার। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের গবেষণা খুবই সীমিত কয়েকজন করেন। তবে বার বার বলার ফলে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, আরও বেশি দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পরিবর্তিত বিশ্বে প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে সরকার প্রধান বলেন, প্রযুক্তির  প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং নতুন থিওরি ৪র্থ শিল্প বিপ্লব এসে গেছে। এরফলে আমাদের লোকবল হয়তো কম লাগবে। কিন্তু প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে এবং সেজন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার আমরা সম্পূর্ণ সেদিকে যেতে চাই না। আমরা শ্রমঘন শিল্পও করতে চাই।

কারণ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে। এই দু’টি মিলিয়ে  আমাদের দেশকে কীভাবে আমরা এগিয়ে নিতে পারি সেই চিন্তাই সবার মাথার মধ্যে থাকতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তারা গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। দক্ষ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত গবেষণা এবং অধ্যয়নের জন্য এমএস, এমফিল, পিএইডডি উত্তর প্রোগ্রামে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ দিচ্ছেন। ২০১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৬৮২ জনকে প্রায় ২৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার ফেলোশিপ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি উত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ দেয়া হচ্ছে। এই ফেলোশিপের আওতায় ২০০৯-১০ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭০১ জন গবেষককে প্রায় ১৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার বৃত্তি বা অনুদান দেয়া হয়েছে।

এটা শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকেও ফেলোশিপ-বৃত্তি-উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা উন্নয়ন কাজে উৎসাহ প্রদানে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মাঝে বিশেষ অনুদান দেয়া হচ্ছে। ২০০৯-১০ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫২১টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা গবেষণা অনুদান দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশাকরি যারা এই গবেষণা বা ফেলোশিপের জন্য অনুদান পেয়েছেন আপনারা একটু আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন। আমি জানতেও চাই আপনারা কি কি উদ্ভাবন করলেন বা তা আমাদের দেশে কতটুকু কাজে লাগবে। আসলে গবেষণার কোনো শেষ নেই। বিজ্ঞান ও গবেষণা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণাই সাফল্য এনে দিতে পারে, এটা এখন প্রমাণিত। গবেষণার কারণে আমরা আমিষ ও খাদ্য উৎপাদনে সফল হয়েছি। ’৯৬ সালে সরকারে এসেই দেশে প্রথমবারের মতো তার সরকার গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ করে।

পরবর্তী বাজেটে তা ১শ’ কোটি টাকায় উন্নীত করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকে জ্ঞান আহরণ করে যেন দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যবস্থাও আমরা করেছি। তাছাড়া সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বায়ো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং নভো থিয়েটার করেছে সরকার। এই নভোথিয়েটার করতে গিয়ে খালেদা জিয়া তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দেয় এবং যে কাজই করতে গেছেন এ ধরনের মামলা- মোকদ্দমা মোকাবিলা করেই করতে হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরেও তার সরকার নভো থিয়েটার করে দিচ্ছে। দেশে শুধু একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার আরও কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছে।

এখন বিভাগীয় শহরগুলোতেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারই প্রথম ২০০৯ সালে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে  জলবায়ু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে পদক্ষেপ নিয়েছে, যা অনেক উন্নত দেশও করেনি। পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগাতে ‘ব্লু ইকোনমি’কেও সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি যত বেশি আমাদের গবেষণা বাড়বে তত বেশি জাতি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের দেশের মানুষ অবদান রাখতে পারবে। সরকার স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সম্প্রসারণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণানুযায়ী তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে এবং রূপকল্প-২০০১ বাস্তায়নের মাধ্যমে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে থেমে থাকলে হবে না।

বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম। আমরা কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়বো না। কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য কাজ করবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। এজন্য সবার আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। কারণ আত্মবিশ্বাসই প্রেরণা ও শক্তি যোগায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা স্মার্ট দেশ গড়ে তুলবো। ২০৪১ এর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: