অভূতপূর্ব রায় দিয়েছে জনগণ, ২ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে আসেনি: রিজভী

অভূতপূর্ব রায় দিয়েছে জনগণ, ২ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে আসেনি: রিজভী

প্রথম নিউজ ঢাকা: কারচুপি নয়, প্রকাশ্যে ডাকাতির ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বিএনপিসহ আন্দোরণরত দলগুলোর আহ্বনে সাড়া দিয়ে জনগণ ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে এক অভূতপূর্ব রায় দিয়েছে। 

রোববার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী দাবি করেন, এমনকি আওয়ামী লীগের বিবেকবান লোকও আজ ভোট দিতে যায়নি বলেও খবর পেয়েছি। ২ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে নিতে পারেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গরু-ছাগল দেখা গেছে, এবারের ভোটের দিন যুক্ত হয়েছে বানরও। প্রহসনের তামাশার ভোট, যেখানে নিজেরা নিজেরা ভোট করছে সেখানেও এই অবস্থা। আমরা কি কারণে ভোট বর্জন করেছি, তা প্রমাণিত। এখন যতই রিগিং করে ভোটের হার বাড়ানোর চেষ্টা করা হোক না কেন জনগণ আর তা বিশ্বাস করবে না।

তিনি বলেন, ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। গতকাল রাতে অনেক ব্যালট বক্স পূর্ণ করা হয়েছে। রাত থেকেই অনেক ঘটনা জানতে পেরেছি। নৌকা মার্কায় সিল মেরেছে। যা প্রমাণ হয়েছে আজ সকালে অনেক ব্যালট পেপারের বইয়ে শুধু নৌকা মার্কায় সিল দেখা গেছে। তাহাজ্জুদের নামাজের সময় ভোট চুরি করেছে। নিজেরা নিজেরা ভোট করেও আবার এই ডাকাতির আশ্রয় নিতে হয়েছে। শাইনপুকুর দোহারে শিশু বাচ্চাদেরও ভোট দিতে দেখা গেছে। এ এক অভিনব কায়দা। সরকারের কোনো লজ্জাও নেই। কেন্দ্র ফাঁকা, অথচ বলে বেরাচ্ছে ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে। এই ভোট কোথা থেকে আসবে। ভোটের হার বাড়িয়ে দেখানোর সব আয়োজন চলছে। জনগণ এত বোকা নয়। হুমকি-ধামকি দিয়ে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও সত্যকে আড়াল করা যাবে না। জনগণ সরকারের ধোকাবাজির চরিত্রটা দেখছে। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা যেহেতু ভোট বর্জন করেছি, সেজন্য ভোট নিয়ে কথা বলার জন্য এই সংবাদ সম্মেলন করছি না। কিন্তু নিজেরা নিজেরাই ভোট করার পরেও যে ভোট ডাকাতির করা হয় তা জানানোর জন্য বলছি। ভোট বর্জর যে যৌক্তিক তা প্রমাণ করে দিয়েছে। একটা ভোটকে নিয়ে যে কি ধরনের ছিনিমিনি খেলতে পারেন তা বলা জন্য এই সংবাদ সম্মেলন। আন্দোরণরত রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জনের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা জনগণ মেনে কেন্দ্রে যাননি; তাতে আমরা আনন্দিত। জনগণ রায় দিয়ে দিয়েছে।

রিজভী আরও বলেন, নির্বাচন ও গণতন্ত্র এসব বিশ্বাস করে না আওয়ামী লীগ। যার প্রতিফলন এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ঘটেছে। তারা কারচুপি করবে বলে অনেক জনপ্রিয় অনলাইন, পত্রিকার অনলাইন ভার্সন বন্ধ টার্গেট করে করেছে। কারণ তারা যা ঘটবে তা লিখবে। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কত গলাবাজি। পোষ্য মিডিয়া দিয়ে দিনরাত মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। একতরফা নির্বাচনের ফল আগেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। তাদের ভিতরে এক আতঙ্ক উদ্বেগ কাজ করছে। কিন্তু গণতন্ত্রের পক্ষের নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সফল হয়েছে তাতে আমরা আনন্দিত। এতো গ্রেফতার, গোয়েন্দাদের টর্চার করার পরও অস্তিত্ব জানান দেওয়া থেকে বিচ্যুত করা যায়নি। ক্রাকডউন চালাচ্ছে। আমাদের আনন্দ একটা, আমরা সত্যের পক্ষে। নির্যাতন-নীপিড়ন উপেক্ষা করে গণতন্ত্রের পক্ষে আছি, আন্দোলন করছি। এই একতরফা ভোটে জনগণ কেন্দ্রে না গিয়ে এক অভূতপূর্ব রায় দিয়েছে। ইতিহাস যার সাক্ষী। 

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার বলে দিলেন ৫০ শতাংশ ভোট হতে পারে। আবার আরেকজন বললেন, তিনি যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সেখানে নৌকার এজেন্ট ছাড়া কাইতে দেখেনি। যদি পরিস্থিতি এই হয়  তাহলে কোথা থেকে আসবে ভোট। আমরা যে বিজয়ী, জনগণকে যে আহ্বান জানিয়েছিলাম ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। আমাদের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার কারণে জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।  

রিজভী অভিযোগ করেন, লাইন লম্বা করার জন্য কোনো কোনো জায়গায় নার্স, আবার অনেক জায়গায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ধরে নিয়ে এসেছে কেন্দ্রে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসনেও এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবে বলে নার্সদের ডেকে এনে লাইনে দাঁড় করিয়েছে। পর্যবেক্ষক চলে যাওয়ার পর আবার তারা চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জেও একই কাজ করা হয়েছে। 

ভোটকেন্দ্রে ভোটার নেই, কিন্তু ছবি তোলার জন্য ডামি লাইন করা হয়েছে। বিদেশি পর্যক্ষেকরা গেলে আবার চলে গেছে। পর্যবেক্ষকরা তা লক্ষ্য করেছেন। হাজার হাজার এসব প্রমাণ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রের বাইরে ভোটার নেই, কিন্তু ভেতরে নৌকায় সিল মারছে এসব ভিডিও এখন ভাইরাল।  বেশিরভাগ জায়গায় প্রকাশ্যেই সিল মেরেছে।