কী আছে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে?

কী আছে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে?

প্রথম নিউজ, অনলাইন :  ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে অবশেষে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে কাতার, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং হামাস। দীর্ঘ ৪৬০ দিন ধরে চলা সংঘাতে গাজায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানান, চুক্তিটি আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

তবে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে এখনো কিছু বিষয়ের সমাধান প্রয়োজন। ইসরায়েল জানিয়েছে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার তাদের মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটি হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে গাজায় প্রায় ৪৭ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
চুক্তির মূল বিষয়বস্তু

এই চুক্তির আওতায় একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এতে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের অবসান এবং বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে উভয়পক্ষের বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এছাড়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নিজ নিজ ঘরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে। যদিও ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের কারণে অসংখ্য বাড়ি আর বাসযোগ্য নেই।

> যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে ছয় সপ্তাহ।

> হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এদের মধ্যে থাকবে নারী, শিশু ও ৫০ বছর বয়সোর্ধ্ব বেসামরিক মানুষ।

> ইসরায়েল বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এদের অনেকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্য থাকবেন ৭ অক্টোবরের পর আটক হওয়া প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনিও।

> ইসরায়েল গাজার জনবহুল এলাকা থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করে সীমান্তের ৭০০ মিটারের বেশি দূরে অবস্থান করবে। তবে নেটজারিম করিডরের নিয়ন্ত্রণ পরবর্তী পর্যায়ে ধাপে ধাপে হস্তান্তর হতে পারে।

> গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা ঘরে ফেরার অনুমতি পাবেন। পাশাপাশি, প্রতিদিন ৬০০টি পর্যন্ত ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে।

> রাফাহ সীমান্ত সাতদিনের মধ্যে খোলা হবে এবং আহত ফিলিস্তিনিরা চিকিৎসার জন্য গাজার বাইরে যেতে পারবেন।

> মিশর-গাজার মধ্যকার ফিলাডেলফি করিডোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ৫০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি সরে যাবে।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপ

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের বিস্তারিত প্রথম পর্যায়ে আলোচনা করা হবে। যদিও বিষয়গুলো নীতিগতভাবে সম্মত বলেই মনে করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনা প্রথম পর্যায়ের ছয় সপ্তাহের সময়সীমা অতিক্রম করে গেলেও যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।

ইসরায়েল বলেছে, প্রথম পর্যায় সম্পন্ন হওয়ার পরে এবং বেসামরিক জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার পরেও তাদের আক্রমণ আবার শুরু করার সম্ভাবনা বাতিল করার জন্য কোনো লিখিত নিশ্চয়তা দেওয়া হবে না।

তবে, বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে উদ্ধৃত একটি মিশরীয় সূত্র অনুসারে, আলোচনায় জড়িত তিন মধ্যস্থতাকারী - মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে মৌখিক নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং তিন পক্ষই এমন একটি চুক্তির জন্য চাপ দেবে যাতে প্রাথমিক ছয় সপ্তাহের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ বাস্তবায়িত হয়।

দ্বিতীয় ধাপে হামাস অবশিষ্ট জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েল আরও ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে এবং গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করবে।

তৃতীয় ধাপে বাকি জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গাজার পুনর্গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

এই চুক্তি কার্যকরের পর গাজার প্রশাসন পরিচালনায় কারা দায়িত্ব পালন করবে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা দায়িত্ব পালন করবে। তবে আরব দেশগুলো বলেছে, তারা এ পরিকল্পনাকে সমর্থন করবে শুধু যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় চুক্তিটি নিয়ে ভোটাভুটি বাকি থাকায় এখনো অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে এই চুক্তি কার্যকর হলে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র: আল-জাজিরা