থার্টি ফার্স্ট নাইটে পদ্মা গ্রুপের মালিকের স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি-হত্যার হুমকি, নেপথ্যে শেখ তন্ময়ের খালাতো ভাই, নীরব গুলশান ক্লাব

থার্টি ফার্স্ট নাইটে পদ্মা গ্রুপের মালিকের স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি-হত্যার হুমকি, নেপথ্যে শেখ তন্ময়ের খালাতো ভাই, নীরব গুলশান ক্লাব

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীর অভিজাত গুলশান ক্লাবে পদ্মা গ্রুপের মালিকের স্ত্রীকে হত্যার হুমকিসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠেছে শেখ হেলালের ভাইরার ছেলে ও শেখ তন্ময়ের খালাতো ভাই মিতালী গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ এহসান আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এহসান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় অভিযুক্ত সমালোচিত মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার স্বামী। এর আগে এহসান আব্দুল্লাহর সঙ্গে খান মোহাম্মদ আমীরের মেয়ের পারিবারিকভাবে বিয়ে হলেও ‘নেশাগ্রস্ত ও চরিত্রহীন’ এহসান আব্দুল্লাহর সঙ্গে পরবর্তীতে ডিভোর্স হয়ে যায়। বর্তমানে তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। শিশুটি তার মায়ের সঙ্গে থাকছে। 

এদিকে গুলশান ক্লাবের এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ও গুলশান ক্লাব কর্তৃপক্ষকে দেয়া লিখিত অভিযোগের কপি ইতোমধ্যে মানবজমিনের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, থার্টি ফার্স্ট নাইটে শেখ তন্ময়ের খালাতো ভাই এহসান আব্দুল্লাহ গুলশান ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পদ্মা গ্রুপের মালিক খান মোহাম্মদ আমীরের স্ত্রীর দিকে তেড়ে আসছেন। এক পর্যায়ে তাকে হত্যার হুমকিসহ অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় মিসেস আমীরের পারিবারিক বন্ধু ও বিএনপির সাবেক এক সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এভাবে তিনি একাধিকবার মিসেস আমীরের দিকে তেড়ে আসেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্বামী ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি খান মোহাম্মদ আমীর গুলশান ক্লাবে লিখিতভাবে অভিযোগ করলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই তারা আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বরাত দিয়ে তার পারিবারিক সূত্র জানায়, পদ্মা গ্রুপের মালিক খান মোহাম্মদ আমীর গুলশান ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে তার স্ত্রী দুই বান্ধবীকে নিয়ে গত ৩১শে ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশান ক্লাবে যান। এ সময় মিসেস আমীর নানানভাবে হেনস্তা ও লাঞ্ছনার শিকার হন জুলাই আন্দোলনের সময় কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা ও পল্টন থানায় বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের মামলার অন্যতম আসামি সৈয়দ এহসান আবদুল্লাহ দ্বারা। মিসেস রুকসানা আমীর ও তার পারিবারিক বন্ধু জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদকে (সাবেক এমপি) মেরে ফেলা এবং হত্যার হুমকি দিতে দেখা গেছে। ঘটনার সময় গুলশান ক্লাবের কোনো কর্মচারি এহসানকে নিবৃত করতে আসেননি। ভুক্তভোগীর স্বামী পদ্মা গ্রুপের চেয়ারম্যান খান মোহাম্মদ আমীর গুলশান ক্লাবের সভাপতির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়, ঘটনার সময় মিসেস আমীরের সঙ্গে বান্ধবী জেসমিন ছিলেন। 

সৈয়দ এহসান আব্দুল্লাহর বাবা সৈয়দ আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ (তুহিন)। মা-মাফরুজা চৌধুরী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের শ্যালিকা। বর্তমানে তারা বনানীর এফ ব্লকে বসবাস করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী রুকসানা আমীর  বলেন, আমি কী বলবো। আপনারা গুলশান ক্লাবে যান সেখানে এ ঘটনার বিস্তারিত ভিডিও ফুটেজ পাবেন। তিনি বলেন, আমি আমার দুই বান্ধবীসহ থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে গুলশান ক্লাবে যাই। রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে ২টা। ভেতরে প্রবেশ করে আমরা বসার অল্প সময়ের মধ্যে সৈয়দ এহসান আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন। আমাকে দেখা মাত্রই মারতে উদ্যত হন। এভাবে দীর্ঘসময় চলতে থাকে। এ সময় ক্লাবে দায়িত্বরত কোনো কর্মচারি কিংবা সদস্যরা এগিয়ে না আসায় আমি ভয় পেয়ে যাই। পরে এক পর্যায়ে আমি আমার মুঠোফোনের ভিডিও অন করি। তখন পুনরায় এহসান আমাদের দিকে তেড়ে আসে। আমাকে হত্যা এবং কেটে টুকরো করে ফেলার হুমকি প্রদান করে। আমার পারিবারিক বন্ধু সাবেক সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা দলের নেত্রী সুলতানা আহমেদকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। 

অভিযোগ রয়েছে, এহসান আবদুল্লাহ ও তার বর্তমান স্ত্রী রাতের রানীখ্যাত মডেল পিয়াসা আদাবর শেখেরটেক মোহাম্মদপুর এলাকায় সরাসরি জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করেন। 

এ বিষয়ে পদ্মা গ্রুপের মালিক খান মোহাম্মদ আমীর বলেন, এ ঘটনায় আমি রীতিমতো ক্ষুব্ধ। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কার কাছে বিচার চাইবো। গুলশান ক্লাবের প্রতিষ্ঠা সদস্য আমি। বানের জলে ভেসে আসিনি। ক্লাবের সদস্য না হয়েও এহসানের মতো একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী গুলশান ক্লাবের মতো একটি অভিজাত ক্লাবে আমার স্ত্রীর সঙ্গে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালো। অথচ গুলশান ক্লাব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। গুলশান ক্লাবের সন্মানিত সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জা হচ্ছে। যেখানে সদস্যদের ন্যূনতম নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের বিবেচনায় নেই। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা আইনজীবী নিয়োগ করেছি।
খুব শীঘ্রই আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

এ বিষয়ে গুলশান জোনের এডিসি মো. আল আমিন হোসেন বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। তবে এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ এহসান আব্দুল্লাহ গত ৮ই আগস্ট কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হওয়া একটি হত্যা মামলার ২৪ নম্বর আসামি। এছাড়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর একটি মামলা হয়েছে। 

তবে ঘটনার বিষয়ে জানতে গুলশান ক্লাব কর্তৃপক্ষ এবং অভিযুক্ত সৈয়দ এহসান আব্দুল্লাহকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, এটা একটি হত্যা মামলা। বিষয়টি তদান্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।