প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই ধাক্কা,মেট্রোরেল লাইন-৫
প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীর যানজট নিরসনে নেওয়া মেট্রোরেল লাইন-৫ (নর্দার্ন রুট) প্রকল্পের কাজে শুরুতেই ধাক্কা। প্যাকেজ-১-এর আওতায় ডিপো স্থাপনসহ ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজের লক্ষ্য ছিল ৪৮ দশমিক ০৩ শতাংশ। কিন্তু ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে ১৬ শতাংশ। হেমায়েতপুর-বিলামালিয়া-আমিনবাজার-গাবতলী-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-কচুক্ষেত-গুলশান-২-নতুন বাজার ও ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিমি. দীর্ঘ এ রেলপথ তৈরি করছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এ প্যাকেজের মেয়াদ ২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৭ সালের জুলাই পর্যন্ত। প্রায় ২ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে গতি বাড়াতে ৬ ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তবে গতি না বাড়ালে এ ধাক্কা ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
গত ২৩ ডিসেম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা হয়। ডিএমটিসিএল-এর এমডি আবদুর রউফের সভাপতিত্বে সভায় বিলম্বের কারণ হিসাবে জুলাই-আগস্ট পরিস্থিতির প্রভাব, ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, গুরুত্বপূর্ণ দুটি মেশিন নষ্ট, বিদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা ও ওয়ার্ক পারমিটে বিলম্ব এবং মোটা বালুর সংকটের কথা বলা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ১৪টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মাটির নিচে থাকবে ৯টি এবং উড়াল হবে ৫টি স্টেশন। এছাড়া মেট্রোরেলের সাড়ে ৬ কিলোমিটার হবে উড়াল এবং সাড়ে ১৩ কিলোমিটার হবে পাতালে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দেবে ৪৫ হাজার কোটি এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বৃহস্পতিবার বলেন, শুরুতেই বাস্তবায়ন কাজে ধাক্কা খেলে এর জের শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকার আশঙ্কা থাকে। তবে এরকম বড় প্রকল্পে বিভিন্ন প্যাকেজে কিছু বাড়তি সময় ধরা হয়। ওই সময়ের মধ্যে যদি প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা আন্তরিক থাকেন, তাহলে ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে কঠোর মনিটরিং এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটানোর বিকল্প নেই।
পিআইসি সভায় অংশ নিয়ে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল) এনামুল হক বলেন, হেমায়েতপুর ডিপোর ভূমি উন্নয়ন ও ভৌত নির্মাণকাজ চলছে। মোট ১০টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১-এর আওতায় হেমায়েতপুর স্টেশনের উত্তর-পূর্বে কর্ণাতলী নদী ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত একটি প্লটে ৩৯ হেক্টর এলাকাজুড়ে ডিপো এবং ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি অন্যতম প্রধান প্রাথমিক কাজ। এছাড়া অন্যান্য প্যাকেজের আওতায় বিভিন্ন সার্ভে ও নকশার কাজ শেষ হয়েছে। ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ শুরুই হয়নি। তবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সার্বিকভাবে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৬ দশমিক ৬৪ এবং ভৌত অগ্রগতি ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, পিছিয়ে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের প্যাকেজ-১-এর গতি বাড়াতে ৬ ধরনের কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে ঠিকাদার। নষ্ট হওয়া ভিএসসিপি মেশিনটি জাপান থেকে আমদানি করা ছাড়াও ওই মেশিনের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত এসএসসিপি মেশিনটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন রাখা হবে। বাস্তবায়ন কাজ দুই শিফটে চলমান রাখা হচ্ছে। একটি অতিরিক্তসহ ৩টি রিগ দুই শিফটে চালু রাখা। পাইল ড্রিলিং কার্যক্রম দুই শিফটে চালু রাখা এবং স্পেয়ার ইক্যুয়েপমেন্টের ব্যবস্থা করা। যাতে পিসি সিট পাইল ড্রিলিং কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারে।
পিআইসি সভায় অংশ নিয়ে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. অছির উদ্দীন সরদার বলেন, দুই শিফটে কাজ চলার পরও কেন কম হলো? জবাবে প্রকল্প পরিচালক জানান, বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে এপ্রিলের মধ্যে অগ্রগতির লক্ষ্যমাত্রায় যে ঘাটতি আছে, তা পূরণ করা সম্ভব। তিনি জানান, সম্প্রতি নেত্রকোনার দুর্গাপুরের মোটা বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রকল্প সাইটে বালু সরবরাহ কমে গেছে।