ফেনীর ৩ নদীর ৩৬ স্থানে ভাঙন, এবারও ক্ষতি কয়েক কোটি টাকা

প্রথম নিউজ, ফেনী: ২০২৪ সালে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখেছিল ফেনীবাসী। সেই ক্ষত না শুকাতেই ফের আঘাত হানে বন্যা। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চলতি মাসেই বন্যার মুখে পড়েছিল ফেনীর জনপদ। এ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৬টি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ তথ্য জানিয়েছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরামে ১৯টি ও ফুলগাজীতে ১৭টিসহ মোট ৩৬টি স্থানে ভেঙেছে।
টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত ৮ জুলাই থেকে জেলার উত্তরের সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল এবং নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো বন্যা দেখা দেয়। তবে ধীরে ধীরে এসব এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
এদিকে, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশে এখনও পানি জমে আছে। তবে জেলার অন্য দুই উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বন্যার পানি নামছে। এর সঙ্গে দেখা দিচ্ছে নতুন দুর্ভোগ, ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। অনেক এলাকায় এখনও খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকট রয়েছে। এতে বানভাসি মানুষ নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনও পানি রয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও পানি নামছে ধীরগতিতে। এছাড়া, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা এলাকার আংশিক অংশে এখনও পানি নামেনি। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুসমান পানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসমালম জানান, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভাঙনে গত ৮ জুলাই থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ দুই উপজেলায় পানি কমে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক এলাকা। প্লাবিত ১১২টি গ্রামের লাখো মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে। ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। ইতিমধ্যে পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছে। দুর্গত এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ২৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় মৎস্য খাতে ৮ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কৃষিতে ৫ হাজার ৫৬৪ দশমিক ৬১ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আকস্মিক ভাঙনস্থলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আগে শুধু ভাঙন এলাকার নাম অনুযায়ী ভাঙনস্থলের সংখ্যা জানতে পেরেছি। শুক্রবার থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘুরে ভাঙনের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান দিয়েছেন। সেজন্য চারদিন ধরে ২০টি ভাঙনের তথ্য থাকলেও এখন বেড়েছে।