পোশাক খাতে উৎসে কর কমানোর দাবি বিজিএমইএ’র
গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি এ দাবি করেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের নীতি সহায়তা চায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর অর্ধেক কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি এ দাবি করেন। মতবিনিময়ে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বিজিএমইএ। আর এটি বাস্তবায়নেই সরকারের নীতি সহায়তা প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে আসন্ন বাজেটে বিজিএমইএ’র কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়।
এগুলো হলো-রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো ০.৫ শতাংশ করে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত তা কার্যকর করা, প্রণোদনার জন্য দেয়া নগদ সহায়তার উপর আয়কর কর্তনের হার ১০% থেকে কমিয়ে ৫% করা, ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইনসেনটিভ অব্যাহত রাখা, পোশাক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির উপর কর রেয়াত এবং এসব পণ্য বিকল বা নষ্ট হলে প্রতিস্থাপনের জন্য রেয়াতি হারে আমদানির সুযোগ দেয়া। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য ফুড রেশনিং বাবদ বিশেষ তহবিল বরাদ্দ এবং নন-কটন পোশাক রপ্তানি ও বিনিয়োগে সহায়তা দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
সরকারের নীতি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমাদের সরাসরি রপ্তানিকারী কারখানার সংখ্যা পাঁচ হাজার থেকে দুই হাজার ২০০টিতে নেমে এসেছে। আমরা যদি কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখতে পারতাম, তাহলে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পেতো, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো। তবে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত হিসেবে পোশাক শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ও সক্ষমতা রয়েছে বলেও মত দেন তিনি।
এ সময় পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আমাদের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪.৯৭ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.০৯ শতাংশ। একই সময়ে আমরা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫.৭৭ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৭ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ। এর কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতির কারণে খুচরা বিক্রি কমে যাওয়া।
ব্যাংক সুদ ১৫ শতাংশ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির প্রসঙ্গও টানেন এসএম মান্নান কচি। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে গড়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পরিবহন খরচসহ সার্বিক উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে গত ৮ মাসে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮-১৬ শতাংশ। শিল্পাঞ্চলের বাইরে বিনিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগ ও রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, অনেক কারখানা এরই মধ্যে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না দিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি যেন এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। শিল্পাঞ্চলের কাজ শেষ হওয়া এবং জায়গা বুঝিয়ে দেয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে তারপর যেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।