পৃথিবীর ‘স্বার্থপর বয়ফ্রেন্ড’ ট্রাম্প
দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক মেরিনা হাইড

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বরাজনীতির রঙ্গমঞ্চ এখন যেন এক অদ্ভুত প্রেমকাহিনির নাট্যশালা। যেখানে একদিকে আছেন বিশ্বের নানা দেশের রাষ্ট্রনায়ক আর অন্যদিকে একজনই-মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ-পৃথিবীর সব প্রান্তেই তার কর্তৃত্ব। মহাদেশ থেকে দ্বীপরাষ্ট্র-দিনশেষে সবই চলে তার ইশারায়। ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য-সবখানেই তার অপেক্ষা।
রাষ্ট্রপ্রধানরা বারবার তার মন জেতার চেষ্টা করছেন। বোঝাপড়ার আশায় একের পর এক সম্মেলন-বৈঠক-ফোনালাপ তো চলছেই। ব্যাখ্যা খুঁজছেন তার খাপছাড়া সিদ্ধান্তের। অথচ ট্রাম্প? দিনদিন যেন তিনি একরোখা হয়ে উঠছেন আরও। বাড়ছে একগুঁয়েমি। একবিংশ পৃথিবীর ‘রাজা’ বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। প্রথম মেয়াদ যেমন-তেমন (২০১৭-২০২১), দ্বিতীয় মেয়াদে নিজেও এমনই ভাবছেন নিজেকে। পৃথিবীর (সব রাষ্ট্র) ভালোমন্দ দেখভালের নায়ক হয়ে ওঠা এ মানুষটি বাস্তবিক আচরণ একজন ‘স্বার্থপর বয়ফ্রেন্ড’-এর মতোই। শয়নে-স্বপনে যে কেবল নিজের স্বার্থই দেখেন সবকিছুর আগে।
‘বিশ্বপুলিশ’-এর মসনদে বসা মানুষটির সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্কটা আসলে একতরফা। নিঃস্বার্থ নয় বরং স্বার্থপরতায় ভরা। অন্যদেশগুলোর সঙ্গে তার প্রতিটি সম্পর্কের অন্তরালেই দেওয়ার থেকে নেওয়ার ঝুলিই বড় হয়ে উঠছে বেশি। ‘সবার আগে আমেরিকা’ স্লোগানের নামে তিনি কেবল নিজেকেই ভালোবাসেন। নিজের ভবিষ্যৎ, নিজের গুরুত্ব, নিজের আলো এবং নিজের নাটকেই ব্যস্ত তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের তিন ধনকুবের দেশ সৌদি আরব, কাতার, আরব আমিরাত সফরই তার বড় প্রমাণ। নিরাপত্তা দেওয়ার নামে ট্রিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে এসেছেন।
দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক মেরিনা হাইড বলেছেন, এই ‘ট্র্যাজিক কমেডি’র চিত্রনাট্য যেন নব্বইয়ের দশকের সেই সেলফ-হেল্প বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে উঠে এসেছে। যখন নারীরা আত্মোন্নয়নে বই পড়ে বুঝতে চাইতেন ছেলেদের মনের কথা। যেখানে লেখা ছিল, ‘সে তোমাকে এড়িয়ে চলে মানে তার ভেতরে গভীর কিছু চলছে’ বা ‘তাকে বোঝার চেষ্টা কর, সে একটু জটিল’। কিন্তু সত্যিটা খুবই সহজ-সে আসলে তোমার প্রতি আগ্রহী নয়।’
মেরিনা বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশ্বনেতারা এমনভাবে মাথা ঘামাচ্ছেন যেন তারা নব্বইয়ের দশকের সেই ‘সেলফ-হেল্প’ বইয়ের পাতা উলটাচ্ছেন। ট্রাম্পের আচরণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেকেই তাকে ‘জটিল’ বলছেন। কেউ আবার বলছেন, তিনি ‘ট্রানজ্যাকশনাল’। অনেকেই বলেছেন, তিনি গম্ভীর নন। কিন্তু এসব ব্যাখ্যার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটাই সত্য-ডোনাল্ড ট্রাম্প কেবল ‘ট্রাম্পেই মগ্ন’। তিনি চান সব আলো তার ওপরই পড়ুক, সব সিদ্ধান্ত তার নিয়ন্ত্রণেই থাকুক আর প্রতিটি ঘটনাজুড়ে থাকুক শুধু তারই নাম। ব্যস। এটাই তার আসল উদ্দেশ্য। জি-৭ সম্মেলনে হঠাৎ অসহযোগিতা, মিত্রদের সঙ্গে বৈরী ভাষা, বোমা হুমকির মতো নাটকীয় সিদ্ধান্ত- সব মিলিয়ে ট্রাম্প যেন এক আজব চরিত্র। আর বিশ্বনেতারা, যারা তার মন জয়ের আশায় নানা ‘সেলফ-হেল্প’ ব্যাখ্যা প্রয়োগ করছেন, তারা যেন সেই নব্বইয়ের দশকের বিভ্রান্ত প্রেমিক। যারা বারবার শুধু নিজেকেই বোঝাচ্ছেন, কোনো সুদিন আসবে- ট্রাম্প তাদের বুঝবে।
তবে মেরিনা বলেছেন, তার আচরণ যদি স্পষ্টও হয়, তবু তাতে নিজের কল্পনা ঢুকিয়ে মানে খোঁজা বন্ধ করুন। তিনি আরও বলেছেন, বিগত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প যেভাবে একের পর এক বিশ্বনেতাকে চমকে দিয়েছেন, অপমান করেছেন, খুনশুটি করেছেন, তা দেখে মনে হচ্ছে- সময় এসেছে এই মোহ ভাঙার। জেগে ওঠার।