নিউনেটাল কার্ডিয়াক কনফারেন্স: হৃদরোগে আক্রান্ত ৬০ ভাগ শিশু চিকিৎসা পায় না

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: দেশে প্রতিবছর ১৫-২০ হাজার শিশু হার্টের রোগ (হৃদরোগ) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যাদের ৪০ শতাংশ চিকিৎসাসেবা পায়, বাকি ৬০ শতাংশ সেবাবঞ্চিত থাকে। দাতব্য সহায়তায় কিছু শিশুর চিকিৎসা হচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।
শনিবার ‘নিউনেটাল কার্ডিয়াক কনফারেন্স-২০২৫’ উপলক্ষ্যে রাজধানীর কল্যাণপুরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানান। নবজাতক ও শিশু হৃদরোগ চিকিৎসায় বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে আয়োজিত এ সম্মেলনে খ্যাতনামা নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ, পেরিনেটাল ও গাইনোকোলজি বিশেষজ্ঞ এবং শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। কিডস হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সেমিনারের সহযোগী ছিল একমি ফার্মাসিউটিক্যালস লি.।
আয়োজক ও চিফ পেট্রন ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, দেশে আমার হাত ধরে ১৯৯৮ সালে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলোজি সাবজেক্ট শুরু হয়।
তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজে শিশু কার্ডিলোজি বিভাগ খুলে নিয়মিত স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম, নিউনেটাল কার্ডিলোজি, নন-ইনভেসিভ করা দরকার। এজন্য অর্থ খরচ হয় না। আমাদের হাসপাতালের সমস্যা নেই, কিন্তু প্রশিক্ষিত জনবলের সংকট আছে। সরকার পেডিয়াট্রিক চিকিৎসকদের জন্য ছয় মাস ও এক বছরের প্রশিক্ষণ চালু করতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, নিউনেটাল কার্ডিয়াক কেয়ার নিয়ে কনফারেন্স হচ্ছে। কার্ডিওলজি ও কার্ডিয়াক সার্জারি চার দশক আগে কোথায় ছিল, আর আজকে কোথায় পৌঁছে গেছে। জাপানের বন্ধুরা আশির দশকে মাসের পর মাস এদেশে থেকে কার্ডিয়াক সার্জারি ও কার্ডিওলজি শিখিয়েছে। কিন্তু দেশে কোয়ালিটি যতটা বেড়েছে কোয়ান্টিটি বাড়েনি। হৃদরোগের চিকিৎসা শহরকেন্দ্রিক রয়ে গেছে। সবাইকে ঢাকামুখী হওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। চিকিৎসকদের বলব অন্তত তিন বছর ঢাকার বাইরে সেবা দিন।
তিনি বলেন, ৮ বিভাগে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতালের নির্মাণ অবকাঠামো শেষের দিকে। অথচ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিভিডি) পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জন ডেডিকেটেড আছে ২-৩ জন। তাহলে বিভাগীয় হাসপাতাল চালবে কিভাবে।
সম্মেলনে আটটি বৈজ্ঞানিক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসকরা সায়েন্টিফিক পেপার উপস্থাপন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম (জুম)-এর মাধ্যমে অংশ নেন। সেশনগুলোতে সভাপতিত্ব ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন দেশের অন্যতম খ্যাতনামা চিকিৎসকরা। যারা নবজাতক ও শিশু চিকিৎসা, পেরিনেটাল কেয়ার ও গাইনোকোলজির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
সেমিনারের বিশেষ আকর্ষণ ছিল হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ (হ্যান্ডস-অন ট্রেনিং) সেশন, যেখানে ১৪০ চিকিৎসককে নিউনেটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি, মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন এবং শিশু হৃদরোগবিষয়ক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই অংশগ্রহণমূলক প্রশিক্ষণ চিকিৎসকদের জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক ও ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করেছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নিউরাল ফোরাম, বাংলাদেশ পেরিনেটাল সোসাইটি ও পিডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশ’র সম্মানিত সভাপতিরা।