নগরবাসীর পৌরকর ৩০ শতাংশ মওকুফসহ আউয়ালের ২৮ দফা ইশতেহার

নগরবাসীর পৌরকর ৩০ শতাংশ মওকুফসহ আউয়ালের ২৮ দফা ইশতেহার

প্রথম নিউজ, খুলনা : ইসলামি আন্দোলনের হাত পাখার প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচিত হলে নগরবাসীর পৌরকর ৩০ শতাংশ মওকুফ এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। চালু করা হবে বন্ধ মিল কলকারখানা। 

রোববার (২৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি এ এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত মডেল সিটি গড়তে ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।


হাতপাখার মেয়রপ্রার্থী মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়া খুলনা সিটি আজ অনেক অবহেলিত ও বঞ্চিত। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহর আজ পরিবেশগতভাবে বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে। খুলনার পাশেই রয়েছে সুন্দরবন। নগরীর দুই পাশে রয়েছে প্রবাহমান নদী যা আমাদের পরিবেশ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। এতো সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও আজ খুলনা আবর্জনা ভরা, যানজট ও মশার শহরে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ২/৫ বারের বেশি লোডশেডিংয়ে নগরবাসী বিরক্ত। সরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত চিকিৎসা অনুপস্থিত। আমাদের সন্তানদের সুষ্ঠু শিক্ষা ও সুন্দর বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নগরের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় আজ খুলনার প্রতিটি অলিগলিতে মাদকের ছড়াছড়ি। বেড়েছে ইভটিজিং ও ছিনতাইয়ের উৎপাত। বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খননের দরুণ পুরো শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে জ্যাম। ফলে ভোগান্তির চরম পর্যায়ে নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের অবহেলায় আজ নগরবাসী বহুবিধ নাগরিক অধিকার হতে বঞ্চিত। সুপেয় পানির অভাব, ডাস্টবিনের সঙ্কট, ল্যাম্পপোস্টের অধিকাংশ লাইট নষ্ট থাকার কারণে খুলনা নগরী হয়ে উঠেছে এক অন্ধকার শহর। এমন হাজারও সমস্যায় জর্জরিত যখন নগরবাসী, ঠিক তেমন মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এই নগরকে বাঁচাতে আর সময়ক্ষেপণ করার অবকাশ নেই। কোনো ধরনের অপরাজনীতি করার সুযোগ নেই। দলান্ধতার কোনো সুযোগ নেই। সময় এসেছে দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে খুলনাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়ার। সময় এসেছে খুলনাকে উদ্ধার করার, খুলনাকে দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কেসিসির মেয়র নির্বাচিত হলে শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দুর্নীতি নির্মূলকরণ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে যেকোনো মূল্যে কেসিসিকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজী মুক্ত করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করব, ইনশাআল্লাহ।

তিনি অঙ্গীকার করে বলেন, মানবিক কারণে পায়েচালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করা হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজি-অটোবাইক এবং জ্বালানি তেলচালিত মাহেন্দ্ৰাসহ অন্যান্য হালকা যানসমূহের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। লাইসেন্স শুধুমাত্র প্রকৃত ড্রাইভারগণকে দেওয়া হবে। খুলনা সিটির বিভিন্ন গাড়ির স্ট্যান্ড ও মালামাল উঠা-নামার ঘাটেন সব ধরণের চাঁদাবাজী বন্ধ করা হবে। ৩০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। কেসিসির বর্ধিতকরণ প্রকল্পে যে সব নতুন এলাকা যুক্ত করা হয়েছে, সে সব এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স ৫ বছরের জন্য মওকুফ করা হবে। তাদের পানির লাইন বিনা খরচে প্রদান করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন এলাকার রাস্তাঘাট ও স্যুয়ারেজ লাইন মানসম্মতভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। টেকসই ও উন্নত রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেসিসিতে টেন্ডার হবে কিন্তু টেন্ডারবাজি হবে না, ই-টেন্ডারিং চালু করা হবে। কেসিসির সামগ্রিক আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট প্রতিবছর প্রকাশ করা হবে।

এ সময় ইশতেহারে সিটি কর্পোরেশনের সব ক্ষেত্রে শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দুর্নীতি মূলৎপাটন কর্মসূচি গ্রহণ, ভেজালমুক্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও ইনসাফপূর্ণ বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।  

বিগত মেয়রদের দেওয়া সব ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার অকার্যকর ও অন্তঃসারশূন্য ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে দাবি করে আব্দুল আউয়াল বলেন, আজ খুলনা সিটি বসবাসের অনুপোযোগী একটি সিটিতে পরিণত হতে চলেছে। শিল্পাঞ্চল খুলনা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

ঘোষিত ইশতেহারে তিনি আরও বলেন, অশুভ কায়েমী স্বার্থবাদী সিন্ডিকেট অবশ্যই ভাঙতে হবে। নোংরা রাজনীতির প্রভাব-দৌরাত্ম থেকে খুলনা সিটিকে রক্ষা করতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরকে বসবাসোপযোগী শান্তির নগরীতে পরিণত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আমূল পরিবর্তনের। দরকার ব্যাপক সংস্কারের। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের। প্রয়োজন সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্বের। 

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্বচ্ছতা আনয়ন, জবাদিহি নিশ্চিতকরণ, শ্বেতপত্র প্রকাশ, নগর বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন, নগর সরকার গঠনে কার্যকর উদ্যোগ, বায়ু দূষণ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, পানি সমস্যার সমাধান, নদীদূষণ, শব্দদূষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গঠন, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ, পরিকল্পিত খুলনা গঠন, যানজট নিরসন, ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিল্ডিং কোর্ডের যথাযথ অনুসরণ, দুর্যোগ সহিষ্ণু নগর গঠন, বাসা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, স্মার্ট পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ। 

এছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত ও পথচারীদের চলাচল উপযোগী করা, আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট গড়ে তোলা, মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, খাল, জলাধার সংরক্ষণ করে জলাবদ্ধতা নিরসণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, হকার ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনবার্সন, নারীবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নাগরিকদের নৈতিক উন্নয়ন, যাকাত বোর্ড গঠন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। 

ইশতেহার ঘোষণায় এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, বিগত নির্বাচনগুলো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক না হওয়ায় এখনো জনমনে শঙ্কা, সংশয় ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। জনগণের সংশয় ও সন্দেহ দূর করতে না পারলে নির্বাচন থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবে। সাধারণ মানুষ যখন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, তখন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এজন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। 

আব্দুল আউয়াল বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা জঞ্জাল, সীমাহীন অনিয়ম, পরিকল্পিত দুর্ভোগ, মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাশীলদের অনৈতিক আধিপত্য নগরবাসীকে বিষিয়ে তুলেছে। জনমনে শান্তি নেই, স্বস্তি নেই; মানবজীবনের নিরাপত্তা নেই। নগরজীবনে স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা সম্মিলিতভাবে খুলনার সমস্যার সমাধান করতে চাইলে এবং খুলনাকে বাসযোগ্য, টেকসই, উন্নত এবং আধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে, আমি নগরবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি। এ মহান কাজে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই। আপনার মূল্যবান ভোটটি হাতপাখা মার্কায় চাই। আমি ইশতেহারে যে সকল কথা উল্লেখ করেছি, আপনারা আমার পাশে থাকলে এবং সহযোগিতা করলে, জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি তা বাস্তবায়ন করবো, ইনশাআল্লাহ। আমাকে হাতপাখা মার্কায় আপনাদের মহামূল্যবান ভোট দিয়ে খুলনার সার্বিক উন্নয়ন ও দূষণমুক্ত পরিকল্পিত আধুনিক খুলনা গড়ার সুযোগ দিন।

সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষনাকালে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক নাসির উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মুফতী আমানুল্লাহ সমন্বয়নকারী মুফতি ইমরান হুসাইন, সহ- সমন্বয়কারী হাফেজ আসাদুল্লাহ গালীব, নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক হাসিব গোলদার, উপ সম্পাদক মুফতী শেখ আমিরুল ইসলাম, আবু গালিব, রবিউল ইসলাম তুষার, আব্দুল্লাহ আল নোমান, ফেরদৌস গাজী সুমন, সাইফুল ইসলাম, মঈন উদ্দিন  আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এম এ সাদী, মাহাদী হাসান মুন্না, এস এম আবুল কালাম আজাদ, ইব্রাহিম খান, মুফতি আব্দুর রহমান মিয়াজী, ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইমরান হোসেন মিয়া ও ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুর রশিদ প্রমুখ।