‘এই অন্যায় মেনে নেব না, এই দমন বন্ধ করো রাষ্ট্র...’

প্রথম নিউজ, অনলাইন: হত্যাচেষ্টা মামলায় নুসরাত ফারিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে অভিনেত্রীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক এই আদেশ দেন।
এদিন সকালে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় আনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে আদালতে তোলা হয়। শুনানির সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফারিয়াকে কারাগারে রাখার আবেদন জানান, অন্যদিকে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন।
নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শোবিজ তারকা থেকে শুরু করে অনেকেই। সবাই অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছেন।
এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে নাজিফা তুষি লেখেন, একজন অভিনেতা সে কোথায় অভিনয় করবে, কেন করবে সেটা তার খুবই ব্যক্তিগত অধিকারের বিষয়। তার যদি মনে হয় এই কাজটা তার করা উচিত, তাহলেই সেটা সে করে।
এখানে আর সবার মতোই শিল্পী স্বাধীন। আর রাষ্ট্র ঠিক করে এটা সে সেন্সর করবে কি না। সে জন্য রাষ্ট্রীয় আইন আছে। একটা আর্ট যেমন মানুষকে বিনোদন দেয় আবার অনেক সময় আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়েও দেয়।
যা অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে। একটা দেশে না না মতাদর্শের মানুষ থাকে। শিল্পীরাও তার ঊর্ধ্বে না। আর্ট এর ফর্ম অনুযায়ী অনেক ধরনের কাজ হয়। প্রেম, রাজনীতি, দেশ, মানুষ এসবই তো শিল্পের বিষয়বস্তু।
কোনো কাজ মানুষকে শুধু বিনোদন দেয় আবার কোন কাজ মানুষকে ভাবায় অথবা ইতিহাসকে তুলে ধরে। কাজের মান ও উপস্থাপন এর উপর ভিত্তি করেই সেটা গ্রহণযোগ্য হয় কিংবা হয় না। সেটার বস্তুনিষ্ঠতাই ঠিক করে দেয় কাজটার মান কি হবে। সেখানে কোন ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করা কোন অপরাধ হতে পারে না। একটা মতাদর্শ তো দেশের পুরো জনগণের হতে পারে না। হতে পারে কিছু মানুষ সেই মতাদর্শে বিশ্বাস করে না। তাই বলে আপনি সেই চিন্তাকে গুড়িয়ে দিতে পারেন না। এটা মনে হয় সম্ভবও না। যদি তাই হয় তাহলে এখন যা হচ্ছে বা হবে তাঁর জন্য ভবিষ্যতে আরও কিছু মানুষকে এরকম অন্যায় মেনে নিতে হবে।
দমন বন্ধ করার দাবিতে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে অভিনেত্রী বলেন, এখনো আমাদের রাষ্ট্র চলছে বৈষম্যর মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রর বৈষম্য আচরণ একটুও পরিবর্তন হয় নাই। এই আন্দোলনের সময় চিৎকার করে বলা হয়েছিল ‘কোটা না মেধা’ আমরা চিৎকার করে তখন বলছিলাম মেধা মেধা। ‘বৈষম্য না সাম্য’ সাম্য সাম্য.... কোথায় সাম্য? মেধা আর সাম্যর কোন কিছু কি আমাদের চোখে পড়ছে? এসব দেখেও এখনো আমরা না দেখার ভান করে থাকি। মনে হয় কিছু না বলাই মনে হয় ভালো। যারা এখনো অকারণে চিৎকার করছে, সেটা যতই অন্যায় হোক রাষ্ট্র মনে হয় সেটাই শুনছে। আমরা নিজেদের পিঠ বাচিয়ে চলছি। কিন্তু ঘটনা যখন বার বার ঘটতে থাকে তখন আমরা আবার নিরুপায় হয়ে পড়ি। আমি একজন অভিনেত্রী হয়ে আমার সহকর্মীদের সাথে ঘটে যাওয়া বার বার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার স্বর উচ্চ করে বলতে চাই… এই অন্যায় আমি মেনে নিবো না। এই দমন বন্ধ করো রাষ্ট্র …।
এর আগে রবিবার (১৮ মে) দুপুরে থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নুসরাত ফারিয়াকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর তাকে ভাটারা থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।