বোমা বিস্ফোরণে আহত তিন ভাই-বোনের একজন মারা গেছে

বোমা বিস্ফোরণে আহত তিন ভাই-বোনের একজন মারা গেছে

প্রথম নিউজ, অনলাইন:   যশোরে বসতঘরে বোমা বিস্ফোরণে আহত হয় তিন ভাই-বোন। তাদের একজন মারা গেছে। সোমবার সকাল ৮টার দিকে শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়া এলাকার বস্তির একটি বসতঘরে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এতে আহত হয় খাদিজা খাতুন (৭), সজীব (৫) ও আয়েশা (৩)। এদের মধ্যে ঢাকায় নেওয়া পথে মারা যায় খাদিজা। আহত অপর দুই ভাই-বোন সজীব ও আয়েশা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

খাদিজা ও সজীব ওই এলাকার শহিদুল ইসলাম সুজন-সুমি খাতুন দম্পতির সন্তান। শহিদুল আত্মহত্যা করলে তার স্ত্রী সুমিকে বিয়ে করেন ছোট ভাই শাহাদত গাজী। তাদের সন্তান আয়েশা খাতুন।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, ঢাকায় নেওয়ার পথে শিশু খাদিজার মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি শিশুরা ককটেলসদৃশ বোমা বাইরে থেকে কুড়িয়ে ঘরে এনেছিল। খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণে তারা আহত হয়েছে।

জানা যায়, শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়ার আধাপাকা টিনের বাড়িতে তিন সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন শাহাদত ও সুমি দম্পতি। কখনো হকারি, কখনো বাদাম বিক্রি করে সংসার চালান তারা। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে তিন সন্তানকে বাড়িতে রেখে কাজের সন্তানে বের হন তারা। ঘরের ভেতর প্যাকেটে খেলনার বলসদৃশ ভেবে হাতে নিয়ে খেলা শুরু করে তাদের বড় মেয়ে খাদিজা (৭)। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রক্তাক্ত অবস্থায় খাদিজা ও সজীবকে দ্রুত উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। অবস্থা গুরুতর হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে খাদিজার মৃত্যু হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছে আয়েশা।

শিশুর দাদি মনোয়ারা বেগম জানান, আমরা সকালে উঠানে বসে খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঘরের ভেতরে বিকট শব্দ শুনি। তাকিয়ে দেখি ধোঁয়া বের হচ্ছে। ঘরে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় ওরা পড়ে আছে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছি।

নিহতের মা সুমি খাতুন বলেন, বাড়ির সামনে খেলার মাঠে কলাগাছের গোড়াতে কেউ বোমা রেখেছিল। সেটা সকালে তারা কুড়িয়ে পেয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। সকালে বের হওয়ার সময় দেখি তাদের হাতে লাল টেপ দিয়ে পেঁচানো বলের মতো কিছু একটা নিয়ে খেলা করছে। আমি দেখে বুঝেছিলাম, বল নিয়ে তারা খেলা করছে। পরে শুনি আমরা সন্তানেরা বোমার আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিভাবে ঘরের ভেতরে এই বোমা এসেছে, সেটা বুঝতে পারছি না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার নাড়িছেঁড়া ধন এভাবে প্রাণ হারাবে, সেটা কখনো বুঝতে পারিনি। এক মেয়েরে তো হারালাম, আরেক সন্তান মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আগে যদি জানতাম, ওদের হাতে বোমা, তাহলে কি আর খেলা করতে দিতাম। কারা আমার এ সর্বনাশটা করল।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ইমন হোসেন জানিয়েছেন, আহত তিনজনের মধ্যে খাদিজা ও সজীবের শারীরিক অবস্থা খারাপ ছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় রেফার করা হয়।