গণতন্ত্রের স্বার্থে এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে: ইশরাক

প্রথম নিউজ, অনলাইন: গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের ভোটার অধিকারের স্বার্থে এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ইশরাক হোসেনের সমালোচনা করেন। সারজিসের সমালোচনার প্রেক্ষপটে সোমবার বিকালে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইশরাকের পোস্টটি যুগান্তরের পাঠকদের জন্য নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘মেয়র ফেওর কিছু না। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় ব্যক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটি চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটা বের করে আনাটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।
হাসিনারেও বলছিলাম কবরটা ঠিক করাই আছে আল্লাহর হুকুম থাকলে সেখানেই হবে ইনশাআল্লাহ। লড়াই শেষ হয় নাই। হয় দাবি আদায় করব না হয় আল্লাহর নির্ধারিত স্থানে মাটির নিচে শায়িত হব। গণতন্ত্রের সঙ্গে, জনগণের ভোটার অধিকারের সঙ্গে এক চুল ছাড় হবে না।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন
অনেক সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছি, পিতা-মাতা তুলে গালাগালও চুপ করে সহ্য করে গিয়েছি। কারণ একটাই, এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের ভোটার অধিকারের স্বার্থে। সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কি ভূমিকা পালন করবে তা ক্লিন-কাট বুঝিয়ে দিল।
কোনো কথা চলবে না, যারা নিরপেক্ষতা শুধু বিসর্জন দিয়েছে নয়, বরঞ্চ একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এরা হাসিনার মতোই বিচারকদের হুমকি দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছে। উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করেছে। এবং আমলাতন্ত্র হাসিনার দোসরদের সঙ্গে নিয়ে লম্বা কুচক্র পরিকল্পনা করছে। একদিন এদের সবার নাম পরিচয় প্রকাশ পাবে।
হাসিনারেও বলছিলাম কবরটা ঠিক করাই আছে আল্লাহর হুকুম থাকলে সেখানেই হবে ইনশাআল্লাহ। লড়াই শেষ হয় নাই। হয় দাবি আদায় করব না হয় আল্লাহর নির্ধারিত স্থানে মাটির নিচে শায়িত হব। গণতন্ত্রের সঙ্গে, জনগণের ভোটার অধিকারের সঙ্গে এক চুল ছাড় হবে না।’
এর আগে সোমবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ইশরাক হোসেনের সমালোচনা করে সারজিস আলম লিখেন, ‘ইশরাক ভাইকে আমি চিনতাম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে হিসেবে। যেদিন হাসিনার পুলিশের হাত থেকে বুক চিতিয়ে নিজের কর্মীকে ছিনিয়ে আনলেন সেদিন থেকে ইশরাক ভাইকে আমি তার পরিচয়ে চিনি, রাজনীতিবিদ হিসেবে চিনি। তার সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। গতানুগতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা বাংলাদেশের পার্সপেকটিভে বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের অন্য দশজন নেতার মতো গতানুগতিক চিন্তাধারার মনে হয়নি।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কথা চিন্তা করে না হোক, অভ্যুত্থানের সামনের সারির আপসহীন একজন নেতৃত্ব ও যোদ্ধার কথা চিন্তা করে হলেও তার স্থানীয় কিছু কর্মীর মাধ্যমে তিনি আসিফ মাহমুদকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাতে পারেন না, অপমানিত করাতে পারেন না, গালিগালাজ করাতে পারেন না, বাবা-মা তুলে কথা বলাতে পারেন না। এটা কখনোই রাজনৈতিক শিষ্টাচারপন্থি না। পরোক্ষভাবে এই দায় তার ওপরেও বর্তায়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম
তিনি অনেক ক্ষেত্রেই সত্যটাকে অকপটে স্বীকার করেন, ইভেন সেটা দলের বক্তব্যের সঙ্গে না মিললেও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এই প্রজন্মের যারা আছেন তাদের থেকে সময়ের, জনগণের এবং আমাদের প্রত্যাশাটা অন্যদের তুলনায় বেশি। ইশরাক ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম।
বিএনপি তাদের জায়গা থেকে অসংখ্যবার বলেছে এবং এটাই সত্য যে বিগত তিনটা জাতীয় নির্বাচন এবং অন্য স্থানীয় নির্বাচনগুলো ছিল একপাক্ষিক, প্রশ্নবিদ্ধ এবং অবৈধ। যে নির্বাচন অবৈধ, সেই নির্বাচনের মেয়র আমি কিভাবে হতে চাই? সেটা কিভাবে বৈধ হয়? তাহলে তো সেই নির্বাচনকে আমি বৈধতা দিয়ে দিচ্ছি।
তাহলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শুধু ইশরাক ভাই কেন, সব জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, ওয়ার্ড এবং সংসদীয় আসনে সবাইকে তাদের জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। মেয়র হয়ে সাময়িক ক্ষমতার ব্যবহার করা, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা; এসবের দিকে তাকিয়ে সামান্য কয়েক দিনের জন্য একটা চেয়ারে বসে অবৈধ নির্বাচনগুলো ইশরাক ভাই যদি বৈধতা দেন তাহলে এটি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে।
আমি বিশ্বাস করি তিনি তার গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তায় এই মাইলস্টোনগুলো ধীরে ধীরে অর্জন করে নিতে পারবেন। কিন্তু সাময়িক প্রাপ্তির আশায় অবৈধ নির্বাচনের সো-কল্ড বৈধ মেয়র হিসেবে বসে তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এত বড় একটি দাগ লাগাবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নেওয়া উচিত।
একটি বিষয় বিচারাধীন প্রক্রিয়ায় থাকাকালীন স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে নগর ভবনের সামনে এর চেয়ে কয়েকগুণ বড় বিক্ষোভ কিংবা অবস্থান কর্মসূচি এখন যেমন করছেন, আগামীতেও তিনি করতে পারবেন। সেই তুমুল জনপ্রিয়তা তার আছে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তাকে তিনি অপরাধের বৈধতা উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারেন না। তার সঙ্গে এটা যায় না।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কথা চিন্তা করে না হোক, অভ্যুত্থানের সামনের সারির আপসহীন একজন নেতৃত্ব ও যোদ্ধার কথা চিন্তা করে হলেও তার স্থানীয় কিছু কর্মীর মাধ্যমে তিনি আসিফ মাহমুদকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাতে পারেন না, অপমানিত করাতে পারেন না, গালিগালাজ করাতে পারেন না, বাবা-মা তুলে কথা বলাতে পারেন না। এটা কখনোই রাজনৈতিক শিষ্টাচারপন্থি না। পরোক্ষভাবে এই দায় তার ওপরেও বর্তায়।
যারা আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি তারাই যদি বিগত অবৈধ নির্বাচনগুলো বৈধতা দেওয়ার জন্য নিজেদের সক্ষমতার অপব্যবহার করে তাহলে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় ঐতিহাসিক দায় তৈরি করবে। ইশরাক ভাই সেই দায় সারাজীবনের জন্য বহন করবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।
আমরা তাকে ব্যক্তিত্বের আনকম্প্রোমাইজ জায়গা থেকে যে উচ্চতায় প্রত্যাশা করি, এসব গতানুগতিক কালচার পলিটিক্সের কারণে সেটা তিনি নির্দ্বিধায় হারাবেন।
রাজনৈতিক দীর্ঘ পথচলার প্রারম্ভেই ক্ষমতার সঙ্গে নীতির নেগোসিয়েশন সাদেক হোসেন খোকার উত্তরসূরির মানায় না, ইশরাক ভাইয়ের মানায় না।’
প্রসঙ্গত, টানা পঞ্চম দিনের মতো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছে আন্দোলনকারীরা। এদিকে সোমবার তারা নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন। এই সময় ভবনের মূল ফটক আটকে রাখেন তারা। যার কারণে ডিএসসিসির সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।