পারিবারিক ভ্রমণ আনন্দ রূপ নিল ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে

প্রথম নিউজ, অনলাইন: পাকিস্তানে সোয়াত নদীতে আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। ভুক্তভোগীরা দুটি পরিবারের সদস্য ছিলেন বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।
ডাস্কার একটি বড় পরিবারের জন্য সোয়াতের ফিজাগাটে এক আনন্দময় গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ মুহূর্তেই রূপ নেয় এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে। নদীর আকস্মিক স্রোতই তাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার শিকার হন পরিবারটির নেতা আব্দুর রহমান, তার পুত্রবধূ রুবিনা কাওসার, নাতি আবদুল্লাহ (১৫), তাজমিন (২১), শারমিন (১৯), কন্যা ফওজিয়া, তার স্বামী মোহসিন ও তাদের চার কন্যা মিরাব (১৭), আজওয়া (১৫), ইশাল (১৩) ও আনফাল (৯)।
আব্দুর রহমানের আরেক কন্যা আয়েশার সঙ্গে নিখোঁজ রয়েছেন তার চার সন্তান- মেয়ে আইমা (১২), এবং তিন ছেলে—আয়ান (৯), জিয়ান (৫), জোহান (৩)।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছিলেন। তখনই আকস্মিক স্রোতে পানির উচ্চতা হঠাৎ বেড়ে যায় এবং সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরাও তৎক্ষণাৎ উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন।
উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের মধ্যে রয়েছেন মিরাব (কলেজছাত্রী), আজওয়া (স্কুলছাত্রী), আয়ান (৬)—ডাক্তার শাহবাজের (আয়েশার স্বামী) ছেলে, এক চাচাতো ভাই ও মোহসিনের শ্যালিকা তোবিনা ইসলাম।
ডাস্কার সেই প্রাণবন্ত পরিবার আজ শোকে মুহ্যমান। গোটা মহল্লা আজ একসঙ্গে শোক পালন করছে।
ডাস্কার সহকারী কমিশনার উসমান গনি শোকাহত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সমবেদনা জানান।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নেটিজেনরা নদী তীরবর্তী পর্যটন এলাকায় জরুরি নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণের ফলে নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে নদীর তীরে অবস্থানরত ১৯ পর্যটক পানি তোড়ে ভেসে যায়। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল।
পিডিএমএ আরও জানায়, ভেসে যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে কেবল তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
পিডিএমএ জানিয়েছে, সোয়াতের মাম ধেরাই, ঘালিগাইসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অনেককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো বহু মানুষ আটকে রয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, অন্তত ৭৫ জন বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছিলেন, যাদের মধ্যে ৫৮ জনকে ইতোমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ১৮ জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পানির উচ্চতা মুহূর্তেই বেড়ে যায় এবং পর্যটকদের ঘিরে ফেলে, যার ফলে তারা সেখান থেকে সরে যাওয়ার সময় পায়নি। ভুক্তভোগীরা দুটি পরিবারের সদস্য, যারা শিয়ালকোট ও মারদান থেকে সোয়াত ঘুরতে এসেছিলেন।
দেশটির রেসকিউ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভেসে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকিদের খোঁজে অভিযান চলছে।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রেসকিউ ১১২২-এর মহাপরিচালক শাহ ফাহাদ বলেন, ‘পাঁচটি স্থানে উদ্ধার অভিযান চলছে, রেসকিউ ১১২২-এর ৮০ জন কর্মী অভিযান চালাচ্ছে। ’
এ ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বন্যার খবর পাকিস্তান