ঢাবিতে দুই সাংবাদিককে রক্তাক্ত করল ছাত্রলীগ

আহত দুই সাংবাদিক এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন

ঢাবিতে দুই সাংবাদিককে রক্তাক্ত করল ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে পিটিয়ে মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ

প্রথম নিউজ, ঢাকা:  সংবাদ সংগ্রহের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আহত দুই সাংবাদিক এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বিকেলে দুই দফায় এ হামলা করে তারা। হামলায় প্রথমে বাংলা ট্রিবিউনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আবিদ হাসান রাসেল ও পরে প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদার গুরুতর আহত হন। আহত আবিদ হাসান রাসেল বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর আসিফ হাওলাদার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের জনগণ’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় জেয়াফতের আয়োজন করে কয়েকজন ব্যক্তি। বিকেল ৪টায় জেয়াফত অনুষ্ঠানের আগে একই স্থানে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি উৎপল বিশ্বাস। জেয়াফত অনুষ্ঠান আয়োজনের পূর্ব মুহূর্তে আয়োজনকারীদের ওপর হামলা চালায় উৎপল বিশ্বাসের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় হামলার ভিডিও ধারণ করতে গেলে সেখানে রাসেলের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

হামলার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য-বিষয়ক সম্পাদক এস এম রিয়াদ, সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক তানসেন শেখ, বিজয় একাত্তর হলের দফতর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তামিম ছিলেন।

হামলার শিকার আবিদ হাসান রাসেল বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ’ ব্যানারে কিছু লোক টিএসসিতে খাবার বিতরণ করছিল। সেখানে আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছবি তুলছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে, তাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। আমি এসবের ছবি তুলছিলাম। এ সময় তারা আমার দিকে তেড়ে আসে। তখন আমি আমার সাংবাদিক পরিচয় দেই এবং আমার গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডও দেখাই। তারা আমার ফোন ও আমার আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে যায়। আমি বারবার বলতে থাকি, আমি সাংবাদিক। তারপরও তারা আমাকে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে মারতে মারতে টিএসসির সঞ্জীব চত্বর থেকে ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে আরেক দফা মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমি আত্মরক্ষার জন্য টিএসসির ভেতরে যেতে চাইলে সেখানেও আরও এক দফা মারধর করা হয়।

এদিকে সন্ধ্যায় মোদিবিরোধী মিছিল শুরু করে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। জোটের মিছিল শেষে টিএসসি থেকে জোটের নেতাকর্মীরা ভিসি চত্বর এলাকার দিকে যেতে থাকলে সেখানে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

হামলার বিষয়ে প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হাওলাদার বলেন, টিএসসিতে বাম সংগঠনের সঙ্গে ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থান ছিল। পরে বাম সংগঠন স্মৃতি চিরন্তনের পিছনে অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগ টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে আসে। ফলো করতে করতে আমি ভিসি চত্বর পর্যন্ত আসি। ভিসি চত্বর থেকে ফুলার রোডের মাথায় বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। ছাত্রলীগের মহানগরের নেতাকর্মীরা বেশি ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কম ছিল যারা বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। আরেকজন সাংবাদিকের ওপরও হামলা করে। বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা দক্ষিণ ফুলার রোডের ৯৩ নম্বর বাসায় অবস্থান নেয়। তাদের লক্ষ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে।

‌‌‘লাঠিসোঁটা দিয়ে বাসার দরজায় আঘাত করতে থাকে। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। পিছন থেকে কয়েকজন এসে জিজ্ঞেস করে, তুই কে? আমি বললাম, আমি সাংবাদিক। প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। এটা শুনে তারা আরও বেশি মারমুখী হয়। আমাকে প্রথমে কিল-ঘুষি দেয়, পরে লাঠিসোটা দিয়ে মারতে থাকে। মারতে মারতে আমাকে মাঠিতে ফেলে দেয়। প্রায় তিন-চার মিনিট আমাকে ইচ্ছেমতো পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বেসরকারি-বিষয়ক সম্পাদক আল আমিন রহমান আমাকে উদ্ধার করে। উনি উদ্ধার না করলে তারা আমাকে মেরে ফেলত।’

তিনি আরও বলেন, আমার পিছনে একটি ব্যাগ ছিল। ব্যাগে তিন হাজার টাকা ছিল আর আমার প্রেস আইডি কার্ড ছিল। তারা এগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কারা হামলা করেছে আমরা বিষয়টি জানতে পারিনি। আমরা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, দেখা যায়, অনেকে কার্ড বানিয়ে সাংবাদিক সেজে ঘুরে বেড়ায়। যার কারণে অনেক সময় সাংবাদিক আর অসাংবাদিককে চিহ্নিত করা যায় না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চিনতে পারেনি, তাই তারা না বুঝে হামলা করেছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom