প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : চীনের রাজধানী বেইজিং ও এর আশপাশের এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার বাসিন্দাকে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিসিটিভির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেইজিংয়ের মিয়ুন জেলা, যেখানে গতকাল সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত ২৮ জন মারা গেছেন। পাশের ইয়ানচিং জেলায় মৃত্যু হয়েছে আরও দুই জনের। রাজধানীর এই দুই এলাকায় তীব্র বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উত্তর বেইজিংয়ের পাশাপাশি, রাজধানীর সংলগ্ন হেবেই প্রদেশের একটি পার্বত্য এলাকায় ভূমিধসে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানে আটজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সিসিটিভি ও চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত বেইজিংয়ের উত্তরের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ৫৪৩.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ১৩৬টি গ্রাম।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং সোমবার রাতে সর্বোচ্চ মাত্রার উদ্ধার অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রাণহানি কমানো যায়। প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং মিয়ুন জেলায় গুরুতর প্রাণহানির কথা জানিয়েছেন। বন্যার ভয়ে বেইজিংয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে, নির্মাণকাজ স্থগিত করা হয়েছে এবং বাইরের পর্যটন বন্ধ করা হয়েছে। নাগরিকদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে মিয়ুন জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধারে পানি বিপজ্জনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায়। ১৯৫৯ সালের নির্মাণের পর এ জলাধারে এত পানি কখনো জমেনি। বাধ্য হয়ে জলাধার থেকে পানি ছেড়ে দিতে হয়েছে, যা নিচু এলাকায় নদীর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
মিয়ুন জলাধারে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৭৩০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়েছে, যা উত্তর চীনের সবচেয়ে বড় জলাধারের জন্য রেকর্ডস্বরূপ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাইশিতুন শহর অন্যতম, যেখানে রাস্তায় পানি জমে যোগাযোগ কঠিন হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যে, বন্যার পানি এত দ্রুত প্রবাহিত হয়েছে যে, এলাকা ডুবে গেছে মাত্র মুহূর্তের মধ্যে।
চীনের কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি তহবিল হিসেবে হেবেই প্রদেশকে ৫ কোটি ইউয়ান (প্রায় ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সহায়তা পাঠিয়েছে এবং উচ্চ পর্যায়ের উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে বেইজিং ও হেবেই প্রদেশ ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিল, যেখানে এক লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তখনও হেবেই ছিল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। চীনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, রাজধানী রক্ষায় ‘মানবসৃষ্ট পরিখা’ তৈরি করার ফলে হেবেইয়ের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।