একমাত্র উপার্জনক্ষম রাহিমকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গুলিতে শহীদ

একমাত্র উপার্জনক্ষম রাহিমকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

প্রথম নিউজ, সাভার: পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা যুবদল সদস্য আবু রায়হান রাহিম (২৯)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তিনি। তাকে হারিয়ে মা রওশন আরা বেগম ও স্ত্রী দিলরুবা খাতুন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চার বছরের ছেলে আবু সোয়াইবের নামে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্ত্রীকে দুপচাঁচিয়া পৌরসভায় অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হলেও যে বেতন পান, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

জানা যায়, গত বছরের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে দুপচাঁচিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য ও হক্কানী টিস্যু কোম্পানির সেলসম্যান আবু রায়হান রাহিম মাঠে নামেন। ৪ আগস্ট সকালে মিছিল থেকে দুপচাঁচিয়া থানায় আক্রমণ করে পুলিশের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তখন পুলিশ ওই অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলিবর্ষণ করলে রাহিমের দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় কাহালুর মুনিরুল ইসলাম মুনির (২২) নামে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। রাহিমকে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ৭ আগস্ট অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। চিকিৎসকরা বাম পা থেকে গুলি বের করলেও ৯ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে রাহিমের মা ১৭ আগস্ট গভীর রাতে দুপচাঁচিয়া থানায় সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেলাল হোসেন প্রামাণিককে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার বাদী পরে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, রাত ২টার দিকে তার কাছ থেকে কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তার ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এর সঙ্গে মামলার আসামিদের কোনো সম্পর্ক নেই।

দুপচাঁচিয়া থানার ওসি ফরিদুর রহমান জানান, রাহিম হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহীদ রাহিমের মা রওশন আরা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, তার ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অনেক সংগঠন ও প্রশাসনের লোকজন এসেছে। তবে শুধু বগুড়া জেলা প্রশাসক দুই লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। বর্তমানে ছেলের বউ, নাতিকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।

দুপচাঁচিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিহত রাহিমের স্ত্রী দিলরুবা খাতুনকে পৌরসভায় অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি দেন। সেখান থেকে মাত্র ৮ হাজার টাকা সম্মানী পান। তা দিয়ে সংসারের খরচ চলে না। রাহিমের ছোট ভাই বায়েজিদ মুন্সী আগে ঢাকায় থাকলেও এখন বাড়িতে চলে এসেছেন। তিনি স্থানীয় একটি পেপার মিলে চাকরি নিয়েছেন।

বায়েজিদ মুন্সী বলেন, ভাই মারা যাওয়ার পর বগুড়ার জেলা প্রশাসক, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে ভাতিজা আবু সোয়াইবের নামে সঞ্চয়পত্র ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই টাকা সংসারে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। মা, ভাবি ও ভাতিজাকে নিয়ে বর্তমানে কোনোরকমে জীবন যাপন করছি। তিনি আরও বলেন, অনেক শহীদ পরিবার মামলা বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের আসামিরা অনেক টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু মা তাদের সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।