খেজুরগুড় তৈরি করে সংসার চলে ত্রিপুরার বিএ পাস সেলিমের
পড়াশোনা করেও জোটেনি চাকরি
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : পড়াশোনা করেও জোটেনি চাকরি। বসে না থেকে তাই কখনো টিউশনি, কখনো জমিতে ফসল ফলান ভারতের ত্রিপুরার সোনামুড়া মহাকুমার সেলিম মিয়া (৫০)। সেইসঙ্গে ছোটবেলায় গাছে চড়ার অভ্যাস না ছেড়ে এটিকে কাজে লাগিয়েই এখন দিব্যি সংসার চালাচ্ছেন সেলিম মিয়া।
১৯৮৯ সালে বিএ পাস করেন সেলিম। এরপর বেশ কিছুদিন সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি। অভাবের সংসারে এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা। নিজেদের বিঘা দুয়েক জমিতে ফসল ফলিয়ে যা কিছু আয় হতো তাতেই সংসার চলতো সেলিমদের। পরে বাবার পাশে দাঁড়াতে তিনি শুরু করেন টিউশনি। পরে বাবা মারা যাওয়ায় কৃষি কাজকেও পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয়েছে সেলিমের।
১৯৯৮ সালে প্রতিবেশী একজন কাছে ডেকে নিয়ে প্রায় হাতে-কলমেই শিখিয়েছিলেন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার কাজ। তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন মূলত সাহায্যের জন্যই। কিন্তু ছোটবেলা থেকে গাছে চড়ার অভ্যাস থাকায় অনায়াসেই এই রস সংগ্রহের কাজ রপ্ত করেন সেলিম। এরপর অভাবের সংসারে এটিকেই পেশা বানিয়ে নেন তিনি। দীর্ঘ প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই পেশাকে আগলে রেখে এখন তার সংসার চালাতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না বলে জানান সেলিম।
তিনি বলেন, পুরো এলাকাজুড়ে হাতেগোনা দু-তিনজন রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের পেশা হিসেবে এই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করার কাজটিকেও বেছে নেন। সেলিম জানান, নিজের জমিতে গোটা পঞ্চাশেক খেজুর গাছ রয়েছে তার। মৌসুমের শুরুতে তিনি এসব গাজ থেকে রস সংগ্রহ করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জমির আরও বেশ কিছু গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন
সেলিম জানান, এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার পর চুলায় জ্বাল দিয়ে ধীরে ধীরে তা থেকেই গুড় তৈরি করেন। মৌসুম চলে যাওয়ার পরও বিভিন্ন বাজারে বাজারে ঘুরে গুড় বিক্রি করেন তিনি। এ বছর এখন পর্যন্ত বাজারে না গেলেও গত বছর যেটুকু লালি বিক্রি করেছেন তার দাম ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। সেলিমের হিসাবে গুড় থেকে প্রতি মৌসুমে তার আয় হয় প্রায় তিন লাখ টাকা।
শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সোনামুড়া মহাকুমার কলমখেত গ্রামে সেলিম মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী সাহেনা বিবি একের পর এক চুলায় জ্বাল দিয়ে যাচ্ছেন ছেকে আনা খেজুরের রস। সেলিম অবশ্য তখনো গাছ থেকে রস নামিয়ে আনার কাজে ব্যস্ত।
ব্যস্ততার ফাঁকেই সেলিম জানান, সকাল সকাল গাছ থাকে হাঁড়ি ভর্তি রস নামিয়ে আনার পর শুরু হয় তাদের জ্বাল দেওয়ার কাজ। এই মৌসুমে অন্তত মাস তিনেক নিয়মিতভাবেই এটি চলতে থাকে তাদের।
তিনি জানান, আগের দিন দুপুরের পর থেকেই গাছে গাছে কলস বসানোর কাজ চলতে থাকে। এরপর পরদিন সকাল না হতেই শুরু হয় এগুলো সংগ্রহের কাজ। কাজটি কঠিন হলেও এতে লাভের পরিমাণ নেহাতই কম নয়। কীভাবে করেন এই কাজ? জানতে চাইলে সেলিম বলেন, দিনে ২০টির বেশি গাছে ওঠা সম্ভব হয় না। পরদিন এই ২০টি গাছের রস সংগ্রহ করে পর্যায়ক্রমে অন্য আরও ২০টি গাছে কলস বসিয়ে আসেন রস সংগ্রহের জন্য। এভাবেই নিয়মিত রস সংগ্রহের কাজটি চালিয়ে যান তিনি।
সেলিম জানান, কাজটি কঠিন হলেও পেশার টানে এখন এই রস সংগ্রহের কাজ একপ্রকার নেশা হয়ে গেছে তার। মৌসুম আসার আগে থেকেই প্রস্তুত হতে থাকেন রস সংগ্রহের জন্য। ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজে বর্তমান প্রজন্ম অবশ্য এগিয়ে আসতে চান না বলে জানান তিনি। এ কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গুড় বলতে কী জিনিস তা বুঝতে পারবে কি না সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। এসব কারণে আগামী প্রজন্মকে নিজ রাজ্যের উৎপাদিত খেজুর গুড় খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: