অসাধুরা বাজারের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান বাজারে যোগসূত্র তৈরি করে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। মঙ্গলবার (২০ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা নীতি সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান বাজারে কৃত্রিম যোগসূত্র তৈরি করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ক্ষতির মুখে ফেলছে। প্রতিযোগীদের নির্মূল করতে ইচ্ছাকৃতভাবে কম দামে পণ্য বিক্রি করছে, যা একটি অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার উদাহরণ।
তিনি বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একইসঙ্গে যেসব ব্যবসায়ী ভোক্তাদের জিম্মি করে ও ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের দেশের প্রতি দায়িত্ববান হতে হবে। বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন প্রতিযোগিতা কমিশন প্রসঙ্গে বলেন, অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতোই প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যকর সক্ষমতা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। যার ফলে সাধারণ মানুষ এ কমিশনের কার্যক্রম থেকে প্রত্যাশিত সুফল পায়নি। তিনি বলেন, জনগণ চায়- তাদের দৈনন্দিন জীবনে যেন ন্যায্য প্রতিযোগিতার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এজন্য প্রতিযোগিতা কমিশনকে বাস্তব কার্যকারিতা অর্জন করতে হবে এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার ভিত্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই সেটা করা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের উন্নয়ন দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। বাজারের স্বাভাবিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা নষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই পরিস্থিতির পরে আমরা ক্ষমতা নিয়ে প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপে এখন দেশের রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে সুদিন এসেছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সফলতা আসছে।
এ সময় প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ শুধু জরিমানা করা নয়, বরং প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষা দেওয়াও এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাজারে যারা অসম ও অন্যায্য প্রতিযোগিতার শিকার- বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান, তাদের সুরক্ষায় কমিশন কাজ করছে। তিনি বলেন, আমাদের বড় লক্ষ্য হলো- গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের গড়ে তোলা সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া এবং সব কোম্পানিকে সমানভাবে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেওয়া।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে আয়োজিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন কমিশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর পরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের আইন সদস্য ড. আফরোজা বিলকিস, ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ইসাম মোসাদ্দেক এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের উপ-আবাসিক প্রতিনিধি মিস সোনালি দয়ারাত্নে।