কারামুক্ত আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী, মামলা থেকে দেওয়া হবে অব্যাহতি
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে কারাগারের ফটক পেরিয়ে বাইরে আসে ওই কিশোর শিক্ষার্থী।
প্রথম নিউজ, রংপুর: জামিনের পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৬ বছর ১০ মাস বয়সী আলফি শাহরিয়ার মাহিম। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে কারাগারের ফটক পেরিয়ে বাইরে আসে ওই কিশোর শিক্ষার্থী। এ সময় কারাগারের প্রধান ফটকে ছিলেন তার বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল, মা আঞ্জুমান আরা ময়না, খালা আয়শা সিদ্দিকা, বড় আম্মা রোশনা, বোন সানজানা ইসলাম স্নেহাসহ পরিবারের অন্যান্য স্বজন এবং আইনজীবীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আদালত থেকে জামিনের আদেশ নিয়ে কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়।
নথিপত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থী মাহিমের বয়স ১৬ বছর ১০ মাস হওয়ায় এবং অপরাধের সাথে জড়িত না থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শিশু আদালত-১ এর বিচারক মোস্তফা কামাল শুনানি শেষে ১০০ টাকার বন্ডে জামিন আদেশ দেন।
ওই শিক্ষার্থীর পক্ষের আইনজীবী জোবাইদুল হক বলেন, মিথ্যা মামলায় ১৬ বছর ১০ মাস বয়সী কলেজছাত্র মহিমকে পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বয়স ১৯ বছর দেখিয়ে আদালতে তুলেছিল। বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। পরে প্রমাণ দিয়ে মেট্রোপলিটন কোতয়ালি আদালত থেকে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নিয়ে আসি আমরা। আদালত ৪ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে পুলিশের সহযোগিতায় পুটআপ দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে আমরা শুনানি করি। পরে বিজ্ঞ বিচারক মাহিমকে জামিন দেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। একজন কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে তাকে অধিক বয়স লিখে কারাগারে পাঠানোটা বেআইনি। এজন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। এদিকে কারাগারের ফটকে ছেলে মাহিমকে বুকে জড়িয়ে ধরে বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ, আমি এই মামলা থেকে তার অব্যাহতি চাই। মামলা থেকে অব্যাহতির বিষয়ে আমরা পুলিশ কমিশনার স্যারের কাছে গিয়েছিলাম তিনিও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এর আগে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ জুলাই পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে কারাগারে পাঠান আদালত। মাহিম গত বছর রংপুর নগরীর আশরতপুর চকবাজার এলাকার সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। তার বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
পুলিশ জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬, ১৮ ও ১৯ জুলাই সংঘাত-সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার পরবর্তী যাছাই-বাছাই করার সুযোগ না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে তারা অবগত হয়েছেন। তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, ১৮ জুলাই যখন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয় মাহিম। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। যেহেতু ১৮ ও ১৯ জুলাই সংঘাত-সংঘর্ষ নিয়ে পুরো বাহিনী ব্যস্ত ছিল, সে কারণে বিষয়টি যাছাই-বাচাই করা সম্ভব হয়নি। মূলত ২০ জুলাই থেকে আমরা যাছাই-বাচাই সাপেক্ষে গ্রেপ্তার করছি।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি পুলিশ কমিশনার অবগত হওয়ার পরই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, মাহিম আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল মাত্র, ওই ঘটনায় জড়িত ছিল না। জামিনের মাধ্যমে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই পুলিশের রাবার বুলেটে মারা যান আবু সাঈদ। এ ঘটনায় এসআই বিভূতি ভূষণ রায় বাদী হয়ে ১৭ জুলাই রংপুরের তাজহাট থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় মাহিমকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
এ ঘটনায় বুধবার (৩১ জুলাই) ভুক্তভোগীর বোন সানজানা আখতার স্নেহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপরই কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
মাহিমকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে- তার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজহাট থানার এসআই জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ওইদিন (১৭ জুলাই) আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন সে পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে (আলফি) ধরা পড়ে।
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ঘটনার দিন তো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে আলফি আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিনও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানে তার সম্পর্কে এত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু, আইন অনুযায়ী তো তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আমরা রাখতেও পারি না। এই কারণে তাড়াহুড়ো করে তাকে চালান দেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনার স্যার ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার জামিনের পর সে মুক্তি পেয়েছে। তাকে চার্জশিট থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেছেন স্যার।