প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১১ দাবি জানিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ
বুধবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব দাবি জানানো হয়।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানী ঢাকার বাইরে টার্মিনাল নির্মাণ না করা পর্যন্ত দূরপাল্লার কোনো গাড়ির কাউন্টার ঢাকা শহর থেকে না সরানোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক–শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। ঢাকা শহরে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশনের’ নামে বিভিন্ন রুটের মালিকদের গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১১টি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বুধবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব দাবি জানানো হয়।
সংগঠনটির পক্ষে সড়ক পরিবহন আইনের যে ধারাটি রুজু না করার দাবি জানানো হয়েছে, ওই আইনের ১০৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি মোটরযান দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন বা মারা যান, তাহলে তা ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী অপরাধ বলে বিবেচনা করা হবে। পেনাল কোডের ৩০৪/বি ধারায় যা-ই বলা থাকুক না কেন, কারও নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানোর ফলে বা অবহেলার কারণে কেউ যদি দুর্ঘটনার শিকার হন এবং এতে যদি কেউ মারা যান বা মারাত্মকভাবে আহত হন, তাহলে তাদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড কিংবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় শাস্তি হবে। তবে খসড়ায় ‘মারাত্মকভাবে আহত’ বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে এবং জরিমানা ৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিষয়টি রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ আরও যেসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে, ঢাকা শহরে বাস রুট রেশনালাইজেশনের নামে বিভিন্ন রুটের মালিকদের গাড়ি চলাচলে বাধা না দেওয়া, ঢাকা শহর ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী সড়ক বাসের রুট পারমিট প্রদান করা এবং রুট পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে রুট ক্যাপাসিটি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মালিক সমিতির ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষে সকল রুটে পারমিট প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভায় বাস টার্মিনালের নির্ধারিত স্থানের বাইরে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ঢাকা শহরে রাখা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে মালিকেরা ব্যবসায় বহু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই ঢাকার বাইরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ না করা পর্যন্ত ঢাকা শহর থেকে দূরপাল্লার কোনো কাউন্টার সরানো যাবে না।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সুপারিশে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী সব গাড়ির রুট পারমিট প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে নির্দেশ প্রদান করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীকে সংগঠনটি আরও বলছে, বাস রুট রেশনালাইজেশনের নামে ঢাকা শহরে অন্যান্য রুটের বাস মালিকদের গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি নতুন গাড়ির রুট পারমিট প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের দুর্দিনে আন্দোলন–সংগ্রামে এবং ২০১৪–২০১৫ সালে বিএনপি–জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ঢাকা শহরে চলাচলকারী গাড়ির মালিক–শ্রমিকেরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, মহাসড়কের পাশে সকল জেলায় এবং হাইওয়েতে ট্রাকের শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও সকল সুযোগ–সুবিধাসহ ট্রাক টার্মিনাল দ্রুত নির্মাণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর অসংগতিপূর্ণ ধারাগুলো সংশোধনের জন্য মালিক–শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সভা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী যে সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছেন, তা অবিলম্বে পাস করতে হবে ইত্যাদি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া দাবিনামায় সংগঠনের পক্ষ স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও সংসদ সদস্য মসিউর রহমান (রাঙ্গা) ও সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীসহ পরিবহন খাতে পাঁচটি সংগঠনের আট নেতা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: