নির্বাচন দ্রুত করার জন্য কি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাগাদা দিলেন?

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ইউনূস-রুবিওর ফোনালাপে বাংলাদেশে শিগগিরই নির্বাচন করার কথা এসেছে। পররাষ্ট উপদেষ্টা এই কথা জানিয়েছেন। এই কথা বলার অর্থ হচ্ছে, দিন কিন্তু ফুরিয়ে আসছে। অর্থাৎ নির্বাচন ছাড়া যারা কল্পনা করছেন, এইটা হলে ওইটা করতে হবে, এটা করতে হবে, তার সময় নেই।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এনসিপি বলছে নতুন সংবিধান না হলে নির্বাচনে যাব না, তারপরে বলছে, জুলাই-আগস্টের ঘোষণা বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে যাব না, আবার কেউ বলছেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন না হলে যাব না। এই দাবিগুলো শেখ হাসিনার সময় যারা আন্দোলন করছে, সেই দাবি ছিল না। তখন কিন্তু একটাই দাবি ছিল যে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
এখন আমেরিকা বা ইউরোপ তাদের মাথায় কিন্তু আছে, শেখ হাসিনার আমলে ভালো নির্বাচন হয়নি। সেই নির্বাচনটা আগে করো। তারপর সংখ্যানুপাতিক জুলাই ঘোষণা, নতুন সংবিধান ঘোষণা সেগুলো ম্যানিফেস্টোতে আনো। ম্যানিফেস্টোতে এনে যদি পাবলিক ভোট দেয় তুমি বাস্তবায়ন করবা।
আগে মূল যে প্রচলিত বিষয় ছিল, সেটার মুখোমুখি হও।’
তিনি তার বার্তায় আরো বলেন, ‘কিন্তু আমি জানি সেইটা ফেস করার সাহস কারো নেই। এটা অনেকটা আওয়ামী লীগের কায়দা। আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন দিত না কেন? আওয়ামী লীগ কি সুষ্ঠু নির্বাচন চেনে না? ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকারের জন্য কি আওয়ামী লীগ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি? যদি কেউ বলে না, করেনি, তবে এটি একটা নির্জলা মিথ্যা। যেটা সত্য সেটা বলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভালো নির্বাচনের জন্য, তার স্বার্থে হোক বা যেভাবে হোক না কেন, তত্ত্বাবধক সরকারব্যবস্থা কায়েম করেছিল। এটা তাদের আন্দোলনের ফসল। তারা এই ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, আজকে আবার অন্যদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে এই ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হচ্ছে। এগুলো হলো বাস্তবতা। যার যেটা ক্রেডিট সেটা দিতে হবে, যার যেটা ডিসক্রেডিট সেটা বলতে হবে। এটা যদি আপনি না বলতে পারেন, তাহলে আপনি সাংবাদিক না। আপনি সাংবাদিক তো দূরের কথা। আপনি বিবেকবান কোনো নাগরিকই না।’
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘আমরা যদি শুনি যে অমুক দেশে এখন একটা অন্তর্বর্তী সরকার আছে। তখন আমরা অপেক্ষায় থাকব, আচ্ছা ঠিক আছে ওসব দেশের সঙ্গে ডিল পরে, আগে সেটেল হোক। একটা দেশের গভর্নমেন্ট সেটেল পজিশনে গেলেই আপনি সেখানে যাবেন। আপনি কী সেখানে যাবেন, যেখানে ইন্টেরিম যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারে? আপনি কী ওই দেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন?’
তিনি বলেন, ‘লং টার্ম কোনো পলিসি নিয়ে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গেলে কিন্তু নির্বাচিত সরকার লাগবে, এমনকি দেশের স্থীতিশীলতার জন্য একটা ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট দরকার। কেননা পুলিশ আপনার কথা তো শুনবে না, ইন্টেরিমের কথা তারা শুনতে চায় না। কয়েক দিন আগে অর্থ উপদেষ্টা সালেউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। এটা বলার পর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বা দাতা দেশগুলো আগ্রহ প্রকাশ করছে, এটিই স্বাভাবিক। আমরা যেমন অন্য দেশের ক্ষেত্রে চিন্তা করি, অন্যরা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে একই রকম চিন্তা করবে।’
তিনি বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যার দল নির্বাচনের আগে বলেছিল, বাংলাদেশ একটা বিশৃঙ্খল দেশ। এখানে কোনো সরকার নেই। একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে আছে বাংলাদেশ। সেই কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, এটা অন্য আঙ্গিক। ওটা আমরা বিশ্বাস করি না। যেভাবে ভারতের বয়ান, সেটা বিশ্বাস করি না। কিন্তু কেন বলে? বলার সুযোগটা পেয়েছে। কারণ, সত্যিকার অর্থে নির্বাচনের তো কোনো ঘোষণা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। কিন্তু একটা নির্বাচনের দিকে গেছে। তারপর এরশাদ পতনের পর বিশৃঙ্খলা ছিল। কিন্তু একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গেছে। একটা সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে আপনাকে থাকতে হবে। এখন সেই কারণে আমার ধারণা যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনেকগুলো বক্তব্যের মধ্যে তার অন্যতম একটা এজেন্ডা ছিল বলেই এ কথা বলেছেন।’
প্রধান উপদেষ্টা তার নিজের দেশের সিসির সঙ্গে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে কথা বলেনি কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কিন্তু বলতে বাধ্য হয়েছেন বলে মোস্তফা ফিরোজ মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, ‘আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টাও কিন্তু একই কথা বলছেন। কারণ নির্বাচনটাকে টার্গেট রেখে যদি কাজগুলো না গোছানো হয়, তাহলে আপনি কিন্তু সমর্থন পাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আপনি সব কিছু করবেন কিন্তু নির্বাচনটা মুখে আনবেন না। যে যার মতো করে সব কুতুব হয়ে বসে থাকবে। এনসিপি মনে করে, আমরা রাজা। বিএনপি মনে করে, আমরা ক্ষমতায়। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, আমরা ক্ষমতায় আসতেছি। এসব ভাব চলবে না। এগুলো সব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরীক্ষিত হতে হবে। মানুষের স্বার্থে একটা নির্বাচন দরকার।’