১১ বছরে একক ঠিকাদারের দরপত্রে ৬০ হাজার কোটি টাকার কার্যাদেশ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করছে, এ ধরনের চর্চায় দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ে।

১১ বছরে একক ঠিকাদারের দরপত্রে ৬০ হাজার কোটি টাকার কার্যাদেশ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: কেবল একজন ঠিকাদার অংশ নিয়েছিলেন, এমন দরপত্রের মাধ্যমে গত ১১ বছরে ৬০ হাজার ৬৯ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। ই-জিপি ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব দরপত্রের প্রতিটিতে একজন ঠিকাদার অংশ নিয়েছিলেন এবং সেই ঠিকাদারই কাজ পেয়েছিলেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করছে, এ ধরনের চর্চায় দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ে।

টিআইবির ধানমণ্ডিস্থ কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে ই-সরকারি ক্রয়: প্রতিযোগিতামূলক চর্চার প্রবণতা বিশ্লেষণ (২০১২-২০২৩)’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ই-টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সম্পাদিত ৯৯ শতাংশের দরপত্র মূল্য ২৫ কোটি টাকার নিচে। অর্থাৎ বড় চুক্তিমূল্যের দরপত্র এখনো পুরোপুরি এ প্রক্রিয়ার আওতায় আসেনি। অন্যদিকে শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদারের কাজের হিস্যা প্রতি বছরই বাড়ছে, গড়ে প্রায় ৩০ ভাগ কাজের নিয়ন্ত্রণই এসব ঠিকাদারের হাতে বলছে টিআইবি।

বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক সরকারি ক্রয়কার্য (ই-জিপি) বাস্তবায়নের বয়স প্রায় এক যুগ হওয়া সত্ত্বেও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারি ই-ক্রয়কার্যের ৯৬ ভাগের বেশি কেনাকাটা হয় দুটি ক্রয় পদ্ধতিতে। এর একটি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি, অন্যটি সীমিত দরপত্র পদ্ধতি। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ৫৩ ভাগ এবং ৪৩ ভাগ কেনাকাটা হয়েছে সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে। ই-ক্রয়কার্যে সবার শীর্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগ (মোট কার্যাদেশের ৪৪ শতাংশ এবং চুক্তি মূল্যের ৪১ শতাংশ)। ই- কেনাকাটার ৯৩ শতাংশ (মোট কার্যাদেশ) আর মূল্যের দিক থেকে ৯৭ শতাংশ মূলত ১০টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ই-ক্রয় কার্যের ৭০ শতাংশ এখনও পাচ্ছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ পাচ্ছেন স্থানীয় নন এমন ঠিকাদার। দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ঠিকাদারের আধিপত্য ইঙ্গিত করে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য যোগসাজশ এবং গোষ্ঠীগত নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ই-জিপি প্রক্রিয়া বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে শুরু হয়েছিল, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, সরকারি খাতে স্বচ্ছতা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক ক্রয় নিশ্চিত করা। ই-জিপি’র ফলে ক্রয়প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে, প্রক্রিয়াসংক্রান্ত ব্যয় কমেছে, তবে দরপত্র জমা ও কার্যাদেশপ্রাপ্তীর ক্ষেত্রে বাজার দখল ও একচেটিয়াকরণ অব্যাহত রয়েছে এবং বাস্তবে তার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। ফলে ই-জিপির মূল লক্ষ্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সর্বনিম্ন মূল্য ও সর্বোচ্চমান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করছি না।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম এর সঞ্চালনায় মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন একই বিভাগের কোর্ডিনেটর মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।