‘স্বর্ণের দোকানের মালিক আরাভ খান পুলিশ খুনের আসামি’

দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিঘিসহ অনেকেই। খুনের মামলার আসামির দোকান উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে তোপের মুখে পড়েছেন তারা।

‘স্বর্ণের দোকানের মালিক আরাভ খান পুলিশ খুনের আসামি’
স্বর্ণের দোকানের মালিক আরাভ খান পুলিশ খুনের আসামি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরেও পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার অন্যতম আসামি আরাভ খানের দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দিঘিসহ অনেকেই। খুনের মামলার আসামির দোকান উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে তোপের মুখে পড়েছেন তারা। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং হিরো আলমকে তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি’র ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, স্বর্ণের দোকানের মালিক আরাভ খান পুলিশ খুনের আসামি বিষয়টি জানানো হয়েছিল সাকিবকে। তারপরেও তিনি দুবাইয়ে কেন গেলেন। এটি দুঃখজনক। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এদিকে গত বুধবার দুবাইয়ে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তবে উদ্বোধনী মঞ্চে না উঠেই ১০ মিনিটের মধ্যে চলে যান তিনি। একই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মঞ্চ মাতান দেশের আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক মামুন। তাকে শুধু হত্যাই করেনি। তার লাশ যেন না পাওয়া যায় সেজন্য কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার পর মামলা হয়, যার তদন্ত করেছে ডিবি। হত্যা মামলায় আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও নকল একজনকে আসামি সাজিয়ে জেলখানায় পাঠায় আরাভ। পরে ডিবি’র তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। এরমধ্যে মূল আসামি দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে বিয়ে করে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই যায়।  আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম একজন খুনি। সে একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করেছে। মিডিয়াতেও অনেকের বলার পরেও সাকিবসহ অন্যান্য তারকারা খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাইয়ে গেছেন এবং তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে যোগ দিয়েছেন। আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ করে ইন্টারপোলের সহায়তায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আরাভ খানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। মামলা রয়েছে, চার্জশিটও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

হারুন অর রশীদ বলেন, যখন কোনো মামলার চার্জশিট দেয়া হয় তখন সব আসামি কে কোথায় আছেন তা খোঁজ-খবর নেয়া হয়। আরাভ খানের বিভিন্ন ছবি প্রকাশ হয় এবং সাকিব আল হাসান টেলিভিশন ও ফেসবুকে ওই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলেন। সবকিছু মিলেই আমরা তথ্য পাই আরাভ খানই পুলিশ খুনের মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। খুনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধারণ করেন রবিউল ইসলাম। ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন। ক্রিকেটার সাকিব অথবা অন্য যারা দুবাইতে গিয়েছেন সাকিবসহ অন্যদেরকেও এটা জানানো হয়েছে। জানানোর পরেও তারা কেন পুলিশ খুনের মামলার আসামির ডাকে দুবাই গেলেন এটা আমি জানি না। সাকিব-হিরো আলম দেশে ফিরলে তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

আরাভ খান সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর আরও অনেক তথ্য মিলেছে। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের ছেলে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। এলাকায় সোহাগ মোল্লা নামে পরিচিত। পুলিশ সদস্যের হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে ‘আরাভ খান’ সপ্তম শ্রেণির গন্ডি না পেরোনো ছেলেটি কী করে দুবাইয়ের কোটিপতি হলেন তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়ায়। তার গ্রামে পাকা ওয়ালের টিনশেডের বাড়ি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আপনের আদি বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায়। সেই সুবাদে প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন সেখানকার এসএম মডেল স্কুলে। যদিও ওই এলাকার মানুষ তাকে সোহাগ মোল্লা নামে চেনে। সপ্তম শ্রেণিতে ফেল করার পর তাকে কোটালীপাড়ায় নিয়ে আসে তার পরিবার। কোটালীপাড়ায় এসে বসবাস শুরু করেন। 

আপনের বাবার নাম মতিউর মোল্লা। তিনি এক সময় খুলনায় থাকতেন। জীবিকার তাগিদে যুবক বয়সেই কোটালীপাড়ায় এসেছিলেন। সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন আপনের বাবা। তিন ভাইবোনের মধ্যে আপন বড়। গ্রামে একাধিকবার আপনকে নিয়ে বিচার সালিশ হলে তাকে বাড়ি থেকে ঢাকা পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার। ১০ বছর আগে একবার আপন গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর আর তাকে গ্রামে আসতে দেখেনি কেউ। আপনের দুই বোনেরই বিয়ে হয়েছে বাগেরহাট জেলায়। কয়েক মাস ধরে গ্রামের বাড়িতে তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সূত্র জানায়, পড়ালেখায় খুবই অমনোযোগী ছিলেন আপন। ১৪ থেকে ১৫ বছর আগে আপন এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। বছর দশেক আগে একবার এসেছিলেন। তখনও তাকে দেখে এতো টাকার মালিক মনে হয়নি। দুই থেকে তিনদিনের মতো গ্রামে কাটিয়েছিলেন। তখনও গ্রামের মানুষ তাকে আপন নামেই চিনতেন। কিছুদিন আগে ফেসবুকে দুবাইয়ের স্বর্ণের দোকানের উদ্বোধনের বিষয়টি দেখে সবাই অবাক হন। 

২০১৮ সালে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ খান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ডিএমপি’র বনানী থানায় ২০১৮ সালের ১০ই জুলাই একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২০১৯ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মামলার এজাহার অনুযায়ী আরাভের আসল নাম রবিউল ইসলাম আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। মামলায় আপনের ঠিকানা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: