যুবলীগ কর্মী কেন্দ্র থেকে ইভিএম নিয়ে গেলেন
গতকাল চট্টগ্রামের নাজিরহাট পৌরসভা ও বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রথম নিউজ, (ফটিকছড়ি) চট্টগ্রাম: ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচনের এবিসি কেন্দ্র। আঙুলে ছাপ দিয়ে সেই গোপন রুমে ভোট দিতে ঢুকেন ভোটার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। পর্দা দিয়ে ঢাকা সেই রুমে তড়িঘড়ি করে ঢুকেন আরও কয়েক যুবক। নৌকা মার্কায় ভোট দিতে জোরাজুরি করতে থাকেন তারা। পরে সালাহউদ্দিন ওই কক্ষের দায়িত্বরত সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তপন কান্তি নাথকে অভিযোগ করে বলেন- ‘এভাবে এই রুমে অন্য কেউ থাকলে ভোটারের তো প্রাইভেসি থাকে না।’ উত্তরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তপন কান্তি নাথ বলেন, ‘কিছুই করার নেই। প্রাইভেসি চাইলে বেরিয়ে যান।’ পরে ভোট না দিয়ে বেরিয়ে যান সালাহউদ্দিন। অভিযুক্ত সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তপন কান্তি নাথ ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরের ঢলু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সালাহউদ্দিনের মতো এরকম ঘটনা ঘটেছে আরও অনেকের সঙ্গে।
গতকাল চট্টগ্রামের নাজিরহাট পৌরসভা ও বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই নির্বাচনেই নৌকার সমর্থকরা ব্যালট রুমে প্রবেশ করে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জোরপূর্বক নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে অনেক জায়গায় দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে নীরব ছিলেন। এরমধ্যে বোয়ালখালী উপজেলার একটি কেন্দ্রের এক যুবলীগ নেতাকে স্বয়ং একটি ইভিএম ইউনিট নিয়ে বের হয়ে যেতে দেখা যায়।
জানা যায়, ভোটের দিন দুপুর ১২টার দিকে বোয়ালখালীর ৮৬ নম্বর জ্যেষ্ঠপুরা রমণী মোহন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে একটি ইভিএম ইউনিট নিয়ে রাস্তায় বসানো নৌকার ক্যাম্পে চলে যান স্থানীয় যুবলীগ নেতা নির্মলেন্দু দে। তার গলায় ঝুলছিল নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিমের ছবি সংবলিত ব্যাজ। ব্যালট ইউনিট প্যানেলটি নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে দায়িত্বরত সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ সামনেই ছিলেন। তিনি কোনো বাধা দেননি। এ ছাড়া, সেখানে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টরা ছিলেন না। এদিকে এই দৃশ্যটি স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক তাদের মোবাইলে ধারণ করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন চৌধুরী ওই যুবলীগ নেতার কাছ থেকে ইউনিটটি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ফেরত দিয়ে যান। পরে তা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দেন ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নির্মলেন্দু দে বলেন, ‘আমাদের ভোটাররা কীভাবে ভোট দিবেন বুঝতেছিল না, তাই এই ইভিএম মেশিনটা নিয়ে এদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আনছিলাম। পরে আবার ফেরত দিয়ে দেয়া হয়েছে।’ এ বিষয়ে কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সজল দাশ গণমাধ্যমকে বলেন, কীভাবে ভোট দেবে, তা দেখিয়ে দেয়ার জন্য এই প্যানেল রাখা হয়েছিল। এটি একটা নমুনা প্যানেল। বাইরে নিয়ে যাওয়ার ছবিসহ দেখানো হলে সজল দাশ বলেন, ‘কীভাবে বাইরে গেল আমার জানা নেই। এটা বাইরে নিয়ে যাওয়া অপরাধ। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
এদিকে বোয়ালখালী ও নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচনে বিভিন্ন অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, আমি একটা ট্রেনিংয়ে ঢাকায় আছি। তাই এই বিষয়ে জানবো না। আপনি জাহাঙ্গীর সাহেবকে ফোন দেন।’ তবে জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইনকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘এখনো কেউ আমাকে অভিযোগ দেইনি এভাবে। আপনি জানিয়েছেন। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম ছাড়াও দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন- কাজী আয়েশা ফারজানা ও এস এম মিজানুর রহমান। আর নাজিরহাট পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা একে জাহেদ চৌধুরী। নির্বাচনে মেয়র পদে আরও চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তারা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট ইসমাইল গণি, আনোয়ার পাশা, নাসির উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর চৌধুরী। আর কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ৪৯ জন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: