Ad0111

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধে-বাঁধে ত্রুটি, দুশ্চিন্তায় কৃষক

৫৩০ কিলোমিটার বাঁধে বড় ভাঙন চিহ্নিত করা হয়েছে ১২৭টি।

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধে-বাঁধে ত্রুটি, দুশ্চিন্তায় কৃষক
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, সুনামগঞ্জ: এই বাঁধ ভাঙলে দিরাই, শাল্লা, খালিয়াজুড়ি, আজমিরীগঞ্জ, ইটনা-মিঠামইনের হাওরের ধানও ভাসাইয়া নিবো, ইটা যত আগে বান্দন (বাঁধ দেওয়া যাবে) যাইবো, তত মজবুত অইবো, ইবার একটু কামে (কাজে) ধীরগতি আছে, তাড়াতাড়ি করলে ভালা অইবো। সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজার বা ভাঙনের একটি জামালগঞ্জের বোগলাখালি (কাইলানির বাঁধে) বাঁধ। সেখানে দাঁড়িয়ে এভাবেই মন্তব্য করছিলেন ফাজিলপুরের কৃষক মতলিব মিয়া।

এ সময় বাঁধ পরিদর্শনে আসা জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি আসাদ আলীকে ডেকে বলেন, দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করুন। আপনারা নদীর মাঝখানে এখনো কেন মাটি ফেলছেন না? পিআইসি সভাপতি আসাদ আলী বললেন, নদীর মাঝখানটা বন্ধ না করার জন্য দিরাইয়ের রফিনগরের মানুষের আপত্তি আছে। এজন্য খোলা রাখা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের ৫২টি হাওরের ফসল অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য এবার ৫৩০ কিলোমিটার বাঁধ ৭২০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসির) মাধ্যমে করা হবে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭১৫টি পিআইসি গঠন হয়েছে। ৫৩০ কিলোমিটার বাঁধে বড় ভাঙন চিহ্নিত করা হয়েছে ১২৭টি। এর মধ্যে ১০০টি বড় ভাঙনসহ ৫২৪টি অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম। এজন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা।

রফিনগর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার বলেন, এখন আর পিয়াইন নদী দিয়ে দিরাইয়ের কালিয়াখুটা হাওরের পানি নামছে না। সামান্য পানি ফুলিয়াটানা দিয়ে নামছে। অন্যান্য বছর বোগলাখালি বাঁধার (বাঁধ দেবার আগে) আগে পানি নামার সময় দেওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি। এবার পানি নামার কোনো সমস্যা নেই। হাওরে ওইভাবে পানিও নেই। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, বোগলাখালি হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধের মধ্যে অন্যতম ক্লোজার। এই ক্লোজার বন্ধের জন্য ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিআইসি এই কাজ করছে। নদীর ডান পাড় থেকে মাঝখান পর্যন্ত এক পিআইসি, বাম পাড় থেকে মাঝখান পর্যন্ত আরেক পিআইসি কাজ করবে। পিআইসিগণ কাজ শুরু করার পরই বলা হয়েছে, প্রতি লেয়ারে লেয়ারে (স্তরে স্তরে) কমপেকসনের (মাটি বসানোর) কাজ করার জন্য। আমরা সামনে থাকলেই সিডিউল মোতাবেক কাজ হয়, না হয় ঠিকভাবে কাজ হয় না। ১৮০ কিলোমিটার বাঁধের কাজ দেখভাল করা আমার একার পক্ষে কঠিন হয়। নতুন তিনজন লোক দেওয়া হয়েছে, তাদের বুঝতে বুঝতে সময় চলে যাচ্ছে।

পিয়াইন নদীর গুরুত্বপূর্ণ বাঁধের কয়েক কিলোমিটার উজানে পাগনার হাওরপাড়ের গজারিয়া ও কান্দবপুরের পাশের ক্লোজারে গিয়ে দেখা গেল, ওখানে বিশাল বাঁধের স্লোফ ঠিকভাবে হয়নি। বাঁধের এক পাশে ফাঁটলও ধরেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী সরেজমিনে বাঁধ দেখার সময় বলেছিলেন, স্লোফ ঠিক না করলে বৃষ্টি আসলেই বাঁধে ধস শুরু হবে।

জামালগঞ্জের লক্ষ্মীপুর ক্লোজারও বিশাল হালির হাওরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওখানে ভেজা মাটি ভেতরে দিয়ে বাঁধ উঁচু করা হচ্ছে, এ কারণে বাঁধের ভেতরের মাটি কমপেকসন হচ্ছে না। এই ক্লোজারের কয়েক কিলোমিটার উজানের মুচিবাড়ী ক্লোজারে কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাঁধের স্লোফ ১৬ মিটারের জায়গায় ১০ মিটার করে রাখা হয়েছে। কেবল বোগলাখালি, গজারিয়ার কান্দবপুর, লক্ষ্মীপুর কিংবা মুচিবাড়ী নয়, জেলাজুড়ে ১২৭ ক্লোজারের সবগুলোর কাজ এখনও অসম্পূর্ণ বা ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে।

হাওররক্ষা বাঁধ মনিটরিং ও বাস্তবায়ন জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে কোনো ত্রুটি মেনে নেওয়া হবে না। বাঁধে বাঁধে কর্মকর্তাসহ আমি নিজে যাচ্ছি, যেখানে কাজ শুরু হয়নি সেখানে তিন দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে। যে বাঁধ অসম্পূর্ণ বা ত্রুটিপূর্ণ দেখছি, এক সপ্তাহ পর আবার যাব। এর মধ্যে ত্রুটি সারাতে হবে, না হয় বিল আটকানোসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জে থেকে তিন দিন ধরে বাঁধে বাঁধে ঘুরছি। জেলার ১২৭ ক্লোজারের ১০০টিতে কাজ চলছে। অন্যগুলোতে এই সপ্তাহে কাজ শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাঁধের কাজ শেষ করতে হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news