যুবলীগ নেতা কৃপাসিন্ধুর কারসাজি,মুদি দোকানি থেকে কোটিপতি
![যুবলীগ নেতা কৃপাসিন্ধুর কারসাজি,মুদি দোকানি থেকে কোটিপতি](https://prothom.news/uploads/images/2025/02/image_750x_67aababb338b5.jpg)
প্রথম নিউজ, অনলাইন: গ্রামীণ হাটের ছোটখাটো মুদি দোকানদার থেকে যুবলীগ সদস্য টিসিবি ডিলার কৃপাসিন্ধু রায় এখন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। এক সময়ের টিনশেডের নড়বড়ে বসতবাড়ি থেকে নতুন দ্বিতল বসতবাড়িসহ তিন তিনটি দ্বিতল ভবনের মালিক বনে গেছেন ওই ডিলার। কৃপাসিন্ধু রায় সুনামগঞ্জের সীমান্ত উপজেলা দোয়ারাবাজারের মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আমবাড়ী বাজারের প্রয়াত ক্ষিতিন্ত্র মোহন রায়ের ছেলে। প্রয়াত ক্ষিতিন্দ্র মোহন রায় ওই উপজেলার আমবাড়ী বাজারে ফুটপাতে চাল আটার কারবারি ছিলেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দোয়ারাবাজারবাসীর মুখে মুখে আলোচনায় স্থান পায় যুবলীগ নেতা কৃপাসিন্ধুর প্রভাব আর অবৈধ আয়ে গড়ে তোলা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, নামে বেনামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের বিষয়টি। শনিবার সরেজমিন দোয়ারাবাজারের আমবাড়ী এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে কৃপাসিন্ধুর অঢেল সম্পদের তথ্য।
উপজেলার আমবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বললেন, এক সময়ের বেকার কৃপাসিন্ধু বসতবাড়ির বারান্দায় খুলে বসেছিলেন স্বল্প পুঁজির ছোটখাটো মুদি মালের (ভুসি মাল) দোকান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ-সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের আশ্রয় প্রশয়ে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেন সেই মুদি দোকানি কৃপাসিন্ধু।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য থেকে যুগ্ম আহ্বায়কের পদপ্রাপ্তি হয়ে ওঠে তার হাতে আলাদিনের চেরাগ মিলে যায় টিসিবির ডিলারশিপ। নিজ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে আমবাড়ী, রামপুরসহ আশপাশের অর্ধশতাধিক পরিবারের লোকজনকে ফাঁসিয়েছেন কৃপাসিন্ধু হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায়। স্থানীয় সংসদ-সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের বাসায় আসা যাওয়ার বলে বাড়তে থাকে প্রভাব কৃপাসিন্ধুর। মুহিবুর রহমান মানিকের ছত্রছায়ায় এক ইউনিয়নের টিসিবির ডিলার হয়ে প্রভাব খাটিয়ে তিন ইউনিয়নের টিসিবির পণ্য ও বরাদ্দকৃত সরকারি ভর্তুকির সার পর্দার আড়ালে থেকে কৃপাসিন্ধু বিক্রি করতেন কালোবাজারি চক্রের নিকট।
এলাকার স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বাণিজ্যে ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য। নিয়োগবাণিজ্যে বাড়তে থাকে অবৈধ আয় রোজগার। উপজেলার দেখার হাওড়ে কিনেছেন নামে বেনামে অর্ধশত কেদার বোরো ফসলি জমি। আমবাড়ী বাজারসংলগ্ন এলাকাতেও কিনেছেন কেদারের পর কেদার আমন ফসলি জমি। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে সিলেট নগরীতে ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আত্মীয়ের মাধ্যমে কৃপাসিন্ধু বিলাসবহুল এলাকায় জায়গা কিনে তৈরি করেছেন আলীশান বাড়ি।
কৃপাসিন্ধুর গুণধর ছেলে কৌশিক রায় বিগত সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ফেসবুক আইডিতে কুরআন শরিফ অবমাননাকর একটি পোস্ট দেয়। ওই ঘটনায় পরে কৌশিকসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জামিনে বের হওয়ার পর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের প্রভাবে ছেলেকে গোপনে পাঠিয়ে দেয়া হয় ভারতে।
শনিবার দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক জানান, ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় ৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় কৃপাসিন্ধুকে। এরপর থেকেই সে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছে।