প্রথম নিউজ, ডেস্ক: ভুল করিলে মাফ নাই, মাফ চাইলেও ক্ষমা নাই,জেলের ঘানি তোমাকে টানিতে হইবেই হইবে। ইহা বিধির বিধান খন্ডানোর কোনো উপায় নাই। সবাই বলাবলি করিতেছে,প্রথম আলো কি ভুল করিয়াছে? কেন তাদের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হইলো?
প্রথম আলোর রিপোর্ট হইতে বলি,
"গত ২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘কার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর।পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় অসংগতি নজরে এলে দ্রুত তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি, উক্তিটি ওই শিশুর; বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।"
দিনমজুর জাকির বলিয়াছেন,আমাদের পেটে ভাত নাই স্বাধীনতা দিয়া কি হইবো? আমাদের চাউলের স্বাধীনতা লাগবো।আমাগো মাছ, মাংস আর চাউলের স্বাধীনতা লাগবো।"
এই ঘটনার জের ধরিয়া সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তেজগাঁও ও রমনা থানায় দুইটি মামলা করা হইয়াছে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলিয়াছেন ডরাইয়েন না মামলা আরো পাইপলাইনে আছে। রমনা থানায় করা মামলায় শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করিয়া গরাদে ঢুকাইয়া দেওয়া হইয়াছে। সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধেও ডিজিটাল কায়দায় মামলা হইয়াছে,এখন গরাদে যাইবার পালা।
সরকার বলিতেছে, এই খবর প্রকাশ করিয়া প্রথম আলো দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করিয়াছে,স্বাধীনতার চেতনা ভূলুণ্ঠিত করিয়াছে।ঢাবি শিক্ষক সমিতি বলিয়াছে প্রথম আলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিয়াছে এতএব তাহাকে শূলে চড়াইতে হইবে।এডিটরস গিল্ড বলিয়াছে প্রথম আলো এই প্রতিবেদন ছাপাইয়া স্বাধীনতাকে হেয় করিয়াছে। অতএব তাহার সম্পাদককে ইস্পাত কঠিন শাস্তি পাইতে হইবে।জাতির বিবেক নাইমুল ইসলাম খান বলিয়াছেন প্রথম আলো সাংবাদিকতা করে না তাহারা সরকার নির্ধারণ করে। তাহারা সাংবাদিকতা ভুলিয়া গিয়াছে।উহাদের নতুন করিয়া সাংবাদিকতা শিখাইতে হইবে।সাংবাদিকদের মাষ্টার গোলাম রহমান যিনি এখন একটি পত্রিকা সম্পাদনায় রত তিনিও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে এক হাত লইলেন।তাহাদের কথা শুনিয়া মনে হইল তাহারা সরকারের হাতকে শক্তিশালী করিতে মালকোচা মারিয়া মাঠে নামিয়াছেন।গোলাম রহমানের গোলামগিরি আর যাইবে না।অতএব তাহাকে লইয়া আর কথা না বাড়াইয়া এডিটরস গিলডসের পানে নজর বুলাইতে পারি।হ্যাতেরা কইছেন প্রথম আলো এই প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়া আমাদের স্বাধীনতাকে হেয় করিয়াছে।হ্যাতেগোরে জিগাই,আমাদের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য কি ছিলোঃ
১.নিশ্চয়ই গণতন্ত্র হরন করা
২.মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরন করা
৩. বিনাভোটের সরকার দিয়া বিরোধীদলের ওপর দমনপীড়ন চালানো দিয়া বিরোধীদলের ওপর দমনপীড়ন চালানো
৪.মানুষের ভোটাধিকার হরন করা
৫.ন্যায়বিচার বনবাসে পাঠানো
৬.সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করা
ইত্যাদি ইত্যাদি............ কায়েম করা।
গিলডসের নেতাদের চোখে মনে হয় বিলাই মুতিয়া দিয়াছে।তাহারা টিসিবির ট্রাকের পিছনের লাইন চোখে দেখে না।বাজারে চাউল,ডাউল কিনিতে যায় না।তাহারা জাকিরের মতো দিনমজুরের মনের ক্ষোভের কথা কিভাবে অনুধাবন করিবে।
প্রথম আলো কোন কথাটি ভুল লিখিয়াছে যাহার কারণে পত্রিকাটির সাংবাদিক শামসকে বাঁশডলা দেওয়া হইতেছে।শামস কি মাফিয়া ডন যে তাহাকে ধরিতে মধ্যরাতে সাজোয়া বহর পাঠাইতে হইবে।সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের জামিন দিয়া মুক্ত আকাশে ছাড়িয়া দেওয়া হয় আর সাংবাদিক শামসকে জামিন তো দূরে থাক এক জেল হইতে আরেক জেল করিয়া সময় কাটাইতে হইতেছে।
দানবীয় সরকারের রোষানলে একজন সাংবাদিক জর্জরিত তখন তাহার পাশে না দাঁড়াইয়া যাহারা সরকারি নিষ্পেষণ যন্ত্রের হাতকে শক্তিশালী করিবার কসরত করে তাহাদের জন্য করুনা ছাড়া আর কিছুই করিবার থাকে না।
আমি দিব্যচোখে দেখিতে পাইতেছি যে সেই সিংহ এবং ছাগলের গল্পের কাহিনির মতো সরকার প্রথম আলোকে বাঁশডলা দিবেই।তাই সেটা পানি ঘোলা করিবার অজুহাতে হউক বা কুতর্ক করিয়া হউক শাস্তি তাহাদের পাইতে হইবেই।
প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সম্পাদক পরিষদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (নোয়াব) বিভিন্ন মানবাধিকার, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছে।তাহাদের সাধুবাদ জানাই।কারণ তাহারা বুঝিয়াছে সরকার তাহার রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করিয়া একজন নিরিহ নাগরিককে শায়েস্তা করিতেছে অতএব এই মুহুর্তে তাহার পাশে দাঁড়ানো এসব সংগঠনের নৈতিক দায়িত্ব।আমি ও একই কারণে সাংবাদিক শামসের পাশে দাঁড়াইতে চাই।
পাশে আছে জাতিসংঘঃ
বাংলাদেশজুড়ে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন এবং অনলাইনে সমালোচকদের কণ্ঠ রোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য ভয়ের সংস্কৃতিকে উস্কে দিয়েছেঃ
শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত দু-তিনটির খবর জানি, আরও মামলা হচ্ছে, আমরা শুনছি।’
তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন যদি কেউ ভুল করে থাকে, সেটির মামলা হবে, বিচারের আওতায় আসবে। কিন্তু যে পদ্ধতির ভেতর দিয়ে তাঁকে (সাংবাদিক শামসুজ্জামান) গ্রেপ্তার করা হলো, তাতে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমার ভয়ের কারণ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আপনি ভয়ের মধ্যে থাকবেন কেন? আপনি তো মিথ্যা তথ্য দেননি, আপনি তো বিভ্রান্তিকর নিউজ দেননি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সংবাদ করেননি। কাজেই আপনি ভয়ে থাকবেন কেন, আপনি নির্ভয়ে চলবেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ার থেকে যখন এমন বক্তব্য আসে তখন তাঁর অধীনস্ত কর্মচারীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কেমন আচরন করতে পারে তা সহজে অনুমেয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জঙ্গলি আইনঃ
২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর থেকে প্রায় ২৮০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করা হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, মামলা, হুমকি ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছেন।
লেখক: আমিরুল ইসলাম কাগজী, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও লেথক (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)